ভৌগোলিক দূরত্ব, সময় কিংবা অতীতের ভুল— সবকিছুকেই হার মানিয়েছে ভালোবাসা। দীর্ঘ দুই দশকের বিচ্ছেদের পর পুনরায় একত্রিত হয়েছেন সাংবাদিক মাহবুবুল আলম মান্নু ও ডেনিশ নাগরিক রুমানা মারিয়া। মাহবুবুল আলম মান্নু দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধি এবং বরগুনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি।
প্রায় ২১ বছর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করেন তারা। অতঃপর মাত্র ১০ দিনের ছুটি নিয়ে সুদূর ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে আসেন রুমানা মারিয়া। আর তাকে স্বাগত জানাতে বরগুনা থেকে রাজধানীতে ছুটে যান মান্নু।
প্রেমের এই পুনর্মিলনের সাক্ষী হয় বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল)। সেদিন আসরের নামাজের পর বরগুনা সদর থানার পেছনের বাড়িতে এক লাখ টাকা দেনমোহরে আবারও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এই দম্পতি। অনুষ্ঠানে মান্নুর পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী ও বরগুনার স্থানীয় সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
স্মৃতির পাতায় ফেরা যাক নব্বই দশকে। জীবিকার তাগিদে তরুণ মান্নু পাড়ি জমিয়েছিলেন ডেনমার্কে। সেখানে এক বন্ধুর ফাস্টফুড দোকানে কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয় রুমানার সঙ্গে। পরিচয় গড়ায় প্রেম। এরপর ১৯৯৭ সালে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন তারা।
বিয়ের পর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মান্নু ফিরে আসেন বাংলাদেশে। বরগুনায় গড়ে তোলেন ‘আকন ডায়াগনস্টিক সেন্টার’, যেখানে দরিদ্র মানুষের জন্য নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন তারা। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক ও পেশাজীবীদের চাপে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০০ সালে রুমানাকে আবার ডেনমার্কে পাঠিয়ে দিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন মান্নু।
দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি সন্তান হয়। প্রাথমিকভাবে টেলিফোনে যোগাযোগ থাকলেও কিছুদিন পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। রুমানা পরে পারিবারিক চাপে পড়ে নতুন করে বিয়ে করলেও সেই সম্পর্ক বেশিদিন টিকেনি।
বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। একসময় ফেসবুকের মাধ্যমে মান্নুর সন্ধান পান রুমানা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় তারা আবারও যোগাযোগ করেন এবং পুরোনো সম্পর্ককে নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
সাংবাদিক মান্নু জানান, “গত জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই ফেসবুকে যোগাযোগ হয়। আমি তাকে সঙ্গে সঙ্গেই চিনতে পারি। তারপর থেকেই আমাদের কথা চলতে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “রুমানা মাত্র দশ দিনের ছুটি নিয়ে এসেছে। অ্যাম্বাসিতে ম্যারেজ সার্টিফিকেট জমা দিলে সে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকতে পারবে। আমি যদি ডেনমার্কে যাই সেক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই। আর না গেলে সে আগামী মাসেই চাকরি ছেড়ে চলে আসবে বাংলাদেশে।”
আরও পড়ুন:: বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় যে শাস্তির অনুমোদন দিল সরকার।