‘জিরো রিটার্ন’ জমা দিলে হতে পারে শাস্তি, যা বলছে আইনে

Ayas-ali-Advertise
‘জিরো রিটার্ন’ জমা দিলে হতে পারে শাস্তি, যা বলছে আইনে
‘জিরো রিটার্ন’ জমা দিলে হতে পারে শাস্তি, যা বলছে আইনে।
‘জিরো রিটার্ন’ জমা দিলে হতে পারে শাস্তি, যা বলছে আইনে
‘জিরো রিটার্ন’ জমা দিলে হতে পারে শাস্তি, যা বলছে আইনে।
Facebook
Twitter
WhatsApp

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, ফরমের সব ঘর শূন্য পূরণ করেই ‘জিরো রিটার্ন’ দাখিল করা যায়। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রোববার (১০ আগস্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘জিরো রিটার্ন’ দাখিল করা বেআইনি এবং এটি করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি হতে পারে।

এনবিআর ওই দিন প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেছে, ‘জিরো রিটার্ন’ নামে কোনো রিটার্ন নেই, বরং আয়ের ভিত্তিতে শূন্য কর হতে পারে। করদাতার আয়কর দেওয়া উচিত তার প্রকৃত আয়ের ওপর ভিত্তি করে। করদাতার যদি মোট আয় তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকার নিচে হয়, তবে তাকে কর দিতে হবে না। তবে রিটার্ন বা বিবরণী জমা দেওয়ার সময় করদাতাকে তার মোট আয়, ব্যয় ও অন্যান্য আয়ের উৎস যেমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক সুদ বা সম্পদের তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।

যদি মোট আয় তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকার নিচে হয়, তখন কর দিতে না হলেও আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে।

এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী, রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ফরমে ‘শূন্য’ শব্দটি লেখা যাবে না; বরং আয় ও ব্যয়ের সঠিক পরিমাণ দিতে হবে। এরপর অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। করদাতা নিজেই কর নির্ধারণ করবেন না।

এনবিআর সতর্ক করেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু অসাধু ব্যক্তি ‘জিরো রিটার্ন’ দেওয়ার নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন এবং করদাতার পক্ষে ‘শূন্য’ রিটার্ন বা প্রতিবেদন দাখিলের সুবিধা দেওয়ার কথা বলছেন। এতে ‘শূন্য রিটার্ন’ অর্থাৎ আয়-ব্যয়ের তথ্য না দিয়ে সব ঘর শূন্য পূরণ করা বুঝানো হচ্ছে, যা ভুল ধারণা।

আয়কর আইন অনুযায়ী, করদাতার প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়-দেনা না দেখিয়ে কোনো তথ্য শূন্য হিসেবে দেখানো সম্পূর্ণ বেআইনি ও ফৌজদারি অপরাধ। ভুল তথ্য দিলে আয়কর আইন ২০২৩-এর ৩১২ ও ৩১৩ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

আয়কর আইনে ‘জিরো রিটার্ন’ নামে কোনো রিটার্ন দাখিলের বিধান নেই। করদাতাদের অবশ্যই তাদের প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়-দেনার সঠিক তথ্যসহ রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তি করদাতারা বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেন, যেখানে সারা বছরের আয়ের বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। আয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার নিচে থাকলে কর দিতে হবে না, তবে রিটার্নে শূন্য লিখে দেওয়া যাবে না, আয়-ব্যয়ের বিবরণ অবশ্যই দিতে হবে।

২০২৩ সালের আয়কর আইনের ১২ নম্বর বিধির ২/৬৯ ধারায় অনিবাসী বাংলাদেশিসহ সাধারণ ব্যক্তিদের মোট আয়ের ওপর কর ধার্য রয়েছে। ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পর্যন্ত আয় করমুক্ত। এর পরবর্তী তিন লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরবর্তী চার লাখে ১৫ শতাংশ, এরপর পাঁচ লাখে ২০ শতাংশ, তারপরে ২০ লাখে ২৫ শতাংশ এবং বাকি আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়।

এনবিআরের তথ্য মতে, দেশে মোট ১ কোটি ২৩ লাখ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন, যেখানে ১৩ হাজার ১০০টি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত। বাকিরা রিটার্ন দাখিল করেন না। যেসব করদাতা রিটার্ন দেন, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশের আয়ের পরিমাণ তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকার নিচে হওয়ায় তারা কর দেন না।

সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এ পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে টিআইএনধারীদের মাত্র ২৮.৫৭ শতাংশই আয়কর রিটার্ন দাখিল করছেন, আর রিটার্নদাতাদের মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশই কর প্রদান করছেন।

এই পরিস্থিতিতে রাজস্ব ফাঁকফোকর বন্ধে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে এনবিআর আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, বিশেষ করে যারা করদায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও আয় কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে।

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪