স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে পৌরসভা বিলুপ্তি, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন বাতিল এবং সরাসরি মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বন্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে। এসব সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকরী ও শক্তিশালী করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, “আমরা তৃণমূল থেকে নানা মতামত সংগ্রহ করেছি এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে এসেছে।”
কমিশন জানিয়েছে, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে, যা ৪৯ হাজার মানুষের মতামত ও সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ১৯৭০ সালে দেশের প্রথম পৌরসভা বিলুপ্ত করা হয়েছিল, এবং নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
পৌরসভা বিলুপ্তির কারণ
দেশে বর্তমানে ৩৩০টি পৌরসভা রয়েছে, যেখানে ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। তবে বেশিরভাগ পৌরসভার আয়ের পরিমাণ কম হওয়ায়, তারা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না এবং কার্যকরী হতে পারছে না। রাজনৈতিক কারণে গঠিত কিছু পৌরসভা নিজেদের আয় থেকে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১০০টিরও বেশি পৌরসভা বর্তমানে অচল অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে এসব পৌরসভার বিলুপ্তির প্রস্তাব উঠেছে, এবং সেগুলো ইউনিয়ন বা উপজেলা এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
নির্বাচনী পদ্ধতিতে পরিবর্তনের প্রস্তাব
বর্তমানে দেশের স্থানীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুযায়ী, জেলা পরিষদ ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠান সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধির নির্বাচন করে। তবে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন নির্বাচনী পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে, কমিশনের প্রস্তাবনায় রয়েছে, ভবিষ্যতে কাউন্সিলর বা মেম্বারদের ভোটে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। এতে একক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ কমবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও অংশগ্রহণমূলক হবে।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, “সরাসরি মেয়র নির্বাচন বাতিলের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।”
এক দিনে নির্বাচন আয়োজন
কমিশনের সুপারিশে এক দিনে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এতে ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে।
এছাড়াও, দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বিধান বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ
বর্তমান আইনে সরকারি চাকরিজীবীরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। তবে কমিশন এই বিধি শিথিলের প্রস্তাব করেছে। এতে যোগ্য এবং দক্ষ প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, “প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তুলে দিলে দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আসার সুযোগ হবে।”
সংরক্ষিত নারী আসনে ক্ষমতা বৃদ্ধি
কমিশনের প্রস্তাবনায় রয়েছে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বিধান বাতিলের বিষয়টি। এছাড়া, সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ না করার বিধান প্রণয়ন নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
তবে সব নির্বাচনের এক দিনে আয়োজন করা চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা বেশি থাকায় এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান। সুত্র বিবিসি
আরোও পড়ুন:: জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার