সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবাধে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে ইয়াবাকে ‘বিচি’, ‘বোতাম’, এবং ‘মাল’ এই তিন সাংকেতিক নামে ডাকছে মাদক চোরাকারবারিরা। সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি ও পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না এ চোরাচালান। তাদের কৌশল ও অদ্ভুত নামকরণের কারণে পুলিশ ও বিজিবির অভিযান পাচ্ছে না সফলতা।
সম্প্রতি প্রকাশিত গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবার চোরাচালান বর্তমানে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে জকিগঞ্জ সীমান্তে । স্থানীয় মাদক চোরাকারবারিরা বিশেষভাবে নদীপথ এবং কাটাতারের বেড়া পেরিয়ে ঢুকিয়ে থাকে ইয়াবার চালান । এমনকি তারা সাংকেতিক ভাষায় এসব মাদককে বিশেষ নাম দিয়ে থাকে যাতে সহজে ধরা না পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তাদের ব্যবহৃত নামগুলোর মধ্যে ‘বিচি’, ‘বোতাম’, এবং ‘মাল’ এই তিনটি নাম বেশী শোনা যায়।
এছাড়া ভারতীয় সীমান্ত থেকে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচারের জন্য সাঁতার কেটে নদী পাড়ি দেয় চোরাকারবারিরা। অথবা মাছ ধরার অভিনব কৌশল ব্যবহার করে নৌকার সাহায্যে মাদক ঢুকায় তারা বাংলাদেশে। বিশেষ করে রাতের আধারে সীমান্ত পেরিয়ে মাদক ঢোকানোর জন্য পাচারকারীদের জন্য এটি সবচেয়ে সুবিধাজনক সময়। পাশাপাশি, কাটাতারের বেড়া পেরিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর স্থানীয় লোকজনও নিয়ে আসে ইয়াবার চালান।
বিজিবি এবং পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও মাদক চোরাকারবারি চক্রকে ধরা হয়ে পড়েছে কঠিন। প্রসাশনের সমন্বিত অভিযানে মাঝেমধ্যে মাদক পাচারকারী গ্রেফতার হলেও মূল চোরাকারবারিরা তাদের পরিকল্পনা বদলে দিয়ে আবারো অবলম্বন করে নতুন কৌশল। বিজিবি ও পুলিশের কর্মকর্তাদের মতে, সীমান্ত এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং আরও নিবিড় নজরদারি চালানোর প্রয়োজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সীমান্তবর্তী অঞ্চলের জনগণ মাদক চোরাচালান নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বিশেষত, এই এলাকার তরুণরা মাদকের সহজ প্রবাহে আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা স্থানীয় কমিউনিটি নেতাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেতাদের মতে, মাদক পাচারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আরো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তাদের পরামর্শ, সীমান্তে পুলিশ এবং বিজিবির উপস্থিতি আরও জোরদার করা উচিত, যাতে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। যদিও বিজিবি এবং পুলিশ মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তবে সিলেট সীমান্তে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আরও প্রয়োজন রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার পাশাপাশি চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া, পুলিশ ও বিজিবির যৌথ অভিযান সফল হওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তে মাদক চোরাচালান রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে স্থানীয় জনগণের সচেতনতা এবং সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজন।
সিলেট জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সম্রাট তালুকদার গণমাধ্যমকে জানান, “সীমান্তের বিষয়টি মূলত বিজিবির তত্ত্বাবধানে থাকে। তবে যখন আমাদের কাছে তথ্য আসে তখন আমরা চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করি। যদিও সম্প্রতি মাদক জব্দের পরিমাণ কম অতীতে আমরা বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করেছি।”
বিজিবি জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার মো. আসাদুন্নবি বলেন, “কিছু সময়ে জকিগঞ্জ সীমান্তে নদীপথে মাদক আনার চেষ্টা করা হয়। আবার শেওলা পয়েন্ট দিয়েও এ ধরনের চেষ্টা দেখা যায়। তবে আমাদের নিয়মিত অভিযান এবং প্রস্তুতির কারণে এসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের কাছে মাদক চোরাকারবারিদের তালিকা রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী আমরা অভিযান পরিচালনা করি। মাঝে মধ্যে গভীর রাতে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালানো হয়।এছাড়া ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে অভিযান পরিচালিত হয়।”
অভিযানে মাদক পাচারকারীদের ধরা পড়ার বিষয়ে বিজিবি অধিনায়ক জানান, “অভিযান পরিচালনাকালে মূলত বাহকরা ধরা পড়ে। পরে, আমরা ওই বাহককে মামলা দিয়ে থানায় হস্তান্তর করি এবং মূল হোতাদের ধরার দায়িত্ব পুলিশের।”