এমদাদুর রহমান মিলাদ :: সুরমা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট নগরীর কুশিঘাট থেকে লামাকাজি সেতু পর্যন্ত প্রথম দফায় প্রায় ১৮ কিলোমিটার নদী খনন করা হচ্ছে। আর অদৃশ্য কারণে ওই খনন কাজের বাহিরে রাখা হয়েছে লামাকাজী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ২ কিলোমিটার চরা। এতে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢল ও তীব্র স্রোতে নদী ভাঙন আরও প্রকট আকার ধারণ করবে এমনটাই আশঙ্কা কররা হচ্ছে। আর ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে।
পাহাড়ী ঢলে ভরাট হওয়ার কারণে শীত মৌসুমে সুরমা নদী শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়। বর্ষায় নদীর তীর উপচে পানি ঢুকে সিলেট নগরীসহ নদী তীরের এলাকায়। এতে পানিতে তলিয়ে যায় সিলেট শহরসহ নদীর তীরবর্তী এলাকা। গত বছর দুই দফা বন্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সিলেটবাসীকে। তাই নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কুশিঘাট থেকে লামাকাজি সেতু পর্যন্ত প্রথম দফায় প্রায় ১৮ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্প গ্রহন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি খনন কাজের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আগামী জুন মাসের মধ্যেই খনন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এই খনন কাজের নকশায় বাদ দেওয়া হয়েছে লামাকাজী সেতুর দক্ষিণ থেকে পরগনা বাজারের পশ্চিম পর্যন্ত তিলকপুর ও হেরাখলা মৌজার প্রায় দুই কিলোমিটার নদী (খননকৃত ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে)।
জানা যায়, ওই দুই কিলোমিটারের মধ্যে দুটি বড় চরা রয়েছে। বালুখেকু কিছু অসৎ ব্যক্তি ওই দুটি চরা প্রতিবছর লিজ নিয়ে বা রাতের আঁধারে লুকিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পশ্চিম পাড় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন জনগুরুত্বপূর্ণ লামাকাজী-বিশ্বনাথ সড়ক, লামাকাজী রাগীব-রাবেয়া স্কুল এন্ড কলেজ, মুন একাডেমী ও মসজিদসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। যদি লামাকাজী সেতুর দক্ষিণ থেকে পরগনা বাজারের পশ্চিম পর্যন্ত দুই কিলোমিটার চরা খনন করা না হয়, তাহলে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢলে ও তীব্র স্রোতে নদী ভাঙন আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। আর লামাকাজী-বিশ্বনাথ সড়ক, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদসহ নদীর তীরবর্তী বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্খা করছে এলাকাবাসী। সুরমা নদীর লামাকাজী এলাকার ওই ২টি গুরুত্বপূর্ণ চরা খনন কাজের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যে লামাকাজী এলাকাবাসীর পক্ষ হতে প্রধানমন্ত্রী বারাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি ও রাগীব-রাবেয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘অদৃশ্য কারণে গুরুত্বপূর্ণ দুটি চরা বাদ দিয়ে নদী খনন কাজের নকশা তৈরী করা হয়েছে। প্রতি বছর ওই দুটি চরা থেকে বালুখেকুরা কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোন করে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা যোগাযোগ করলে তারা জানান, নদীর এই ২ কিলোমিটারে গভীরতা থাকায় তা খনন করা হচ্ছে না।’ নদী তীব্র ভাঙন থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে ওই দুটি চরা খনন কাজের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এবিষয়ে কথা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘নদীর খনন কাজের প্রকল্প গ্রহনের পূর্বে সমীক্ষার জন্য দায়িত্ব দেওয়া ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)-কে। তারা সমীক্ষা করে নদীর যে সকল স্থানে খনন করার জন্য নকশা তৈরী করেছেন আমরা তা খনন করছি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’
আইডব্লিউএম এর বন্যা ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক তরুণ কান্তি মজুমদার বলেন, ‘সুরমা নদীর পুরো ১৮ কিলোমিটার খনন করা হবে না। আমরা সমীক্ষা করে নদীর যে স্থানে পানির ধারণ ক্ষমতা কম সেই স্থান খননের জন্য নকশা তৈরী করেছি। ওই স্থানে (লামাকাজী সেতুর দক্ষিণ থেকে পরগনা বাজারের পশ্চিম পর্যন্ত) যদির নদীর পূর্ব পার্শ্বে চরা রয়েছে, কিন্ত পশ্চিম পার্শ্বে ধারণ ক্ষমতার থাকায় ওই অংশটুকু নকশা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন কিছুই করার নেই।’