সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট সীমাবদ্ধ বা “রেস্ট্রিক্টেড” হওয়ার ঘটনা এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি মেটা (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) তাদের নীতিমালা আরও কঠোর করার পাশাপাশি অটোমেটেড মনিটরিং সিস্টেম জোরদার করায় অনেক ব্যবহারকারীর প্রোফাইল হঠাৎ করেই রেস্ট্রিক্টেড হওয়ার সম্মুখীন হচ্ছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অসতর্ক ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারীরা এই সমস্যায় পড়তে পারেন। ফেসবুকের কঠোর নীতিমালা এবং স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং সিস্টেমের কারণে এমন ঘটনা ঘটলেও, সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব। তবে কোন কোন মারাত্মক ভুলের কারনে অনেক সময় হয় হারাতে পারেন আপনার আইডি। তাই জেনে নেই কেন রেস্ট্রিক্টেড হতে পারে ফেসবুক আইডি ও কি করলে পেতে পারেন সমাধান।
কেন হঠাৎ ফেসবুক আইডি রেস্ট্রিক্টেড হয়?
মেটার প্ল্যাটফর্ম পলিসি অনুযায়ী, ফেসবুকের অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীর প্রতিটি কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যান করে। সাম্প্রতিক ডেটা অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ থেকে ৮ লক্ষের বেশি অ্যাকাউন্ট সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
ফেসবুক আইডি রেস্ট্রিক্টেড হওয়ার ১০টি প্রধান কারণ
১. কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন:
অশ্লীল ছবি/ভিডিও, যৌনতামূলক মন্তব্য, বা ঘৃণ্য বক্তব্য শেয়ার করা।
উদাহরণ: ধর্ম, বর্ণ, বা লিঙ্গভিত্তিক বিদ্বেষ ছড়ানো।
২. ভুয়া প্রোফাইল তৈরি:
কারও পরিচয় চুরি করে বা জাল তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা।
৩. স্প্যামিং কার্যক্রম:
একই পোস্ট বারবার শেয়ার করা, অস্বাভাবিক হারে বন্ধু অনুরোধ পাঠানো।
৪. প্রাইভেসি লঙ্ঘন:
অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি, ফোন নম্বর, বা চ্যাট লিক করা।
৫. নিষিদ্ধ কনটেন্টের প্রচার:
মাদক, অস্ত্র, জুয়া, বা পাইরেসি সংক্রান্ত কনটেন্ট শেয়ার।
৬. হ্যাকিং বা বট ব্যবহার:
থার্ড-পার্টি অ্যাপ/বট ব্যবহার করে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার বাড়ানো।
৭. ভুয়া খবর ছড়ানো:
গুজব, ফেক নিউজ, বা বিভ্রান্তিকর তথ্য শেয়ার করা।
৮. আক্রমণাত্মক আচরণ:
ব্যবহারকারীদের গালিগালাজ, সাইবার বুলিং বা হুমকি দেওয়া।
৯. অটোমেটেড সিস্টেমের ফ্ল্যাগ:
ফেসবুকের AI সিস্টেম কর্তৃক সন্দেহজনক কার্যকলাপ চিহ্নিত হওয়া।
১০. কপিরাইট আইন ভঙ্গ:
অন্যের কনটেন্ট (ছবি, ভিডিও, আর্টিকেল) অনুমতি ছাড়া শেয়ার করা।
রেস্ট্রিকশন সমাধানের ৭টি কার্যকরী উপায়
১. ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করুন
অ্যাকাউন্ট লগ ইন করে “সাপোর্ট ইনবক্স” বা ইমেইল চেক করুন। সেখানে রেস্ট্রিকশনের কারণ ও সমাধানের গাইডলাইন দেওয়া থাকবে।
২. আপিল জমা দিন
স্টেপ ১: ফেসবুক হেল্প সেন্টার -এ যান।
স্টেপ ২: “আপিল ফর্ম” পূরণ করে লঙ্ঘনের কারণ ব্যাখ্যা করুন।
স্টেপ ৩: প্রয়োজনে জাতীয় আইডি, পাসপোর্ট, বা ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
৩. পরিচয় যাচাই করুন
ফেসবুক প্রোফাইলের নাম ও তথ্য সরকারি ডকুমেন্টের সাথে মিললে রেস্ট্রিকশন দ্রুত উঠে।
৪. কনটেন্ট ডিলিট করুন
যদি ভুলবশত নিষিদ্ধ কনটেন্ট শেয়ার করে থাকেন, তা মুছে ফেলুন এবং ফেসবুককে জানান।
৫. সাইবার ক্রাইম বিভাগে রিপোর্ট করুন
বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম বিভাগের হটলাইন ৯৯৯ এ ফোন করুন বা ওয়েবসাইট থেকে অভিযোগ জমা দিন।
উপরের কাজ গুলো সম্পন্ন করার পর অপেক্ষা করুর, সাধারণত ছোট খাট ভুল হয়ে থাকলে ২৪ ঘণ্টা, ৩ দিন বা ৭ দিনের ভিতর অস্থায়ী বন্ধ স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠে।
আরও পড়ুন:: ফেসবুকে যে পোস্ট করলে হতে পারে মহা বিপদ।