যাদের জন্য রোজা হয়ে ওঠে অর্থহীন

Ayas-ali-Advertise
যাদের জন্য রোজা হয়ে ওঠে অর্থহীন
প্রতীকি ছবি।
যাদের জন্য রোজা হয়ে ওঠে অর্থহীন
প্রতীকি ছবি।
Facebook
Twitter
WhatsApp

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হলো সাওম তথা রোজা। এটি আত্মসংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আধ্যাত্মিক উন্নতির এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ও তাকওয়ার প্রশিক্ষণের জন্যই রোজার বিধান নির্ধারিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। তোমরা যেন মুত্তাকি হতে পার।” (সুরা বাকারা আয়াত: ১৮৩)।

এই আয়াতে মহান আল্লাহ ঈমানদারদের সতর্ক করেছেন, যাতে তারা সবসময় আল্লাহভীতি অবলম্বন করে এবং ইসলামের বিধান অনুসারে জীবন পরিচালনা করে। অর্থাৎ তাদের প্রতিটি কাজ যেন কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক হয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা অনুসারে পরিচালিত হয়। রোজাদারের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত উচ্চ। মহান আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে বলেন, “রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।” নবী করিম (সা.) বলেন, “যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।

যাদের রোজা মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে

কোরআন ও হাদিসে রোজাদারদের জন্য অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। তবে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যাদের রোজা অর্থহীন হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা সারাদিন উপবাস থাকলেও প্রকৃত রোজার সৌন্দর্য ও তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত হন। নিচে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

মিথ্যাবাদী : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত—রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও সে অনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ করেনি তার পানাহার বর্জন (রোজা রাখা) আল্লাহর কাছে কোনো মূল্য বহন করে না।” (মিশকাতুল মাসাবিহ)।

আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় বাধাদানকারী: আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় যারা বাধা দেয়। তাদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কঠোর সতর্কবাণী রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “যেসব লোক আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তদনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না তারা কাফের।” (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৪৪)। সুতরাং যারা আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়। তাদের রোজা রাখা আর না খেয়ে থাকা সমান।

নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি: মহানবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি নেশাদ্রব্য পান করে এবং তওবা না করেই মারা যায়। সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সুনান আন-নাসাঈ)।

পিতা-মাতার সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বার্ধক্যে পাওয়ার পরও জান্নাত লাভ করতে পারল না সে ধ্বংস হোক।” (সুনান আত-তিরমিজি ও সহিহ ইবনে হিব্বান)।

অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান মাস পেল অথচ গুনাহ মাফ করাতে পারল না।” (সুনান আত-তিরমিজি)।

রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও আমাদের দায়িত্ব

রোজা পালনের অন্যতম লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাকওয়া বৃদ্ধি করা। তাই রোজা রেখে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করা এক ধরনের ভণ্ডামি ও নাফরমানি। যেমন—

অসাধুতা, প্রতারণা, মিথ্যাচার, অন্যায়-অত্যাচার, অশ্লীলতা ও বেপর্দায় চলাফেরা; খুন, সন্ত্রাসবাদ, জুয়া ও মদ্যপান; সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি ও অপব্যয়; ওজনে কম দেওয়া, পণ্যে ভেজাল, মজুতদারি ও কালোবাজারি; আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ও প্রতিবেশীর প্রতি অবহেলা; অধীনস্থ কর্মচারীর প্রতি অন্যায় আচরণ; হারাম উপার্জন, গান-বাজনা ও অশ্লীল বিনোদন—এসব কাজ রোজার মূল উদ্দেশ্যের বিপরীত এবং আল্লাহর অপছন্দনীয়।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “অনেক রোজাদার রয়েছেন যারা তাদের রোজার দ্বারা কেবল ক্ষুধা ও পিপাসাই অনুভব করে। আবার অনেকে সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করলেও তারা কেবল রাত জাগার কষ্টই ভোগ করে।” (মিশকাতুল মাসাবিহ)।

রোজা শুধু উপবাস থাকার নাম নয়; বরং এটি এক মহান শিক্ষা—আত্মসংযম, ধৈর্য, তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির। যদি কেউ রোজা রেখেও ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করে তাহলে তার রোজা অর্থহীন হয়ে যায়। যেমন দুধের মধ্যে নাপাক কোনো বস্তু মিশ্রিত হলে তা নষ্ট হয়ে যায়।

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা

ইসলাম কেবল কিছু আদেশ পালনের ধর্ম নয় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামের বিধানসমূহ পুরোপুরি মেনে চললেই প্রকৃত রোজার ফজিলত লাভ করা সম্ভব। তাই আমাদের উচিত রমজান মাসে আল্লাহর বিধান মেনে চলার মাধ্যমে প্রকৃত তাকওয়ার পথে নিজেকে পরিচালিত করা।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪