রজব মাস এলেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ কাছে রজব ও শা’বানে বরকত কামনা করতেন এবং রামাযান পর্যন্ত পৌঁছার তাওফিক্ব চাইতেন।রামাযানকে কেন্দ্র করে শা’বান থেকেই তিনি প্রস্তুতি নিতেন।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় নেয়ামতের একটি মহিমান্বিত রামাযান।কুরআন নাযিলের এই মাস রোজা,লাইলাতুল ক্বাদর,ক্বিয়ামুল লাইলসহ রহমত,বরকতে ভরপুর।
রামাযানের প্রধানতম আমল রোজা।রোজা ইসলামের পঞ্চস্তমের একটি।হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকেই রোজার বিধান চলে আসছে।তবে একেক উম্মতের জন্য ছিলো রোজার ভিন্ন ভিন্ন ধরণ।উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য রোজা হচ্ছে-সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার,সহবাস থেকে বিরত থাকা।রোজার শুরু হয় সেহরি দিয়ে।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেহরিতে বরকতের সুসংবাদ দিয়েছেন।রোজা শেষ হয় ইফতারের মাধ্যমে। ইফতার করা ও করানোর অসংখ্য ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।রোজার উদ্দেশ্যে সম্পর্কে আল্লাহ তা’লা বলেছেন—যাতে তোমরা তাক্বওয়াবান হতে পারো(সুরা বাকারা-১৮৩)।তাক্বওয়া অর্থাৎ আল্লাহর ভয়।
শান্তির জীবন,সুশৃংখল সমাজ,সমৃদ্ধ দেশ-জাতি গঠনে তাক্বওয়া প্রধান শর্ত।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাক্বওয়ার মাধ্যমে সোনালী যুগ সৃষ্টি করেছিলেন।রাসুল সা.এর রাষ্ট্রে কোন আইন শৃংখলা বাহিনী ছিলো না।তথাপি সে রাষ্ট্রে কোন অপরাধ তো ছিলোই না।নফস বা শয়তানের প্ররোচনায় কেউ অপরাধের পাশাপাশি গেলেও শাস্তি গ্রহণের জন্য নিজেই এসে হাজির হয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে।যে রাষ্ট্রের ভিত্তি তাক্বওয়ার উপর সেখানে কোন পুলিশের প্রয়োজন নেই।হযরত ওমর রাযি.’র যামানায় রাতের আধারে যখন মা তার মেয়েকে দুধে পানি মেশাতে বলছিলেন তখন মেয়ে জবাবে বলেছিলেন রাতের আধারে কেউ না দেখলেও আল্লাহ তো দেখছেন।রামাযানের পিপাসার্ত,ক্ষুধার্ত মুহুর্তেও বান্দা লুকিয়েও পানাহার করে না।কারণ সে এটা অনুধাবন করে -আল্লাহ তাকে দেখছেন।যখন মানুষ এই বোধ ও সচেতনতায় অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন আর কোন নাফরমানিতে লিপ্ত হতে পারে না।রামাযানজুড়ে তাক্বওয়াপূর্ণ জীবন গঠনের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন আল্লাহ তা’লা।যাতে বান্দার বাকি বছর তাক্বওয়াভিত্তিক হয়।আল্লাহর ইবাদতের হয়।এ হায়াত তো কেবল তার ইবাদতের জন্যই তিনি দান করেছেন।এ অর্থে রামাযানকে তাক্বওয়া প্রশিক্ষণের মাসও বলা যায়।
রামাযানের রোজা কেবলই উপবাস থাকা বা সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম নয়।যখন রোজা হবে কেবল আল্লাহর জন্য তখন সেটি রোজা।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে আল্লাহকে খুশি করার জন্য রামাযানে রোজা রাখবে আল্লাহ তার অতিতে পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন(বোখারী শরিফ-৩৮,নাসাঈ শরীফ-২৫১৮)।হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা’লার ঘোষণা- রোজা আমার জন্য,আমি নিজে এর প্রতিদান প্রদান করবো(বোখারী শরীফ১৮৯৪)
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, জামিয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথ।
আরও পড়ুন:: মহিমান্বিত শবে বারাআত করণীয়-বর্জনীয়।