সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত ৫ আগস্ট লাপাত্তা হয়ে যান। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে কয়েকটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন আনোয়ারুজ্জামান। তার দেওয়া ভিডিও বার্তাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সৃষ্টি করে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক।
সম্প্রতি তিনি মানবজমিন পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের দেশত্যাগ ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।
আনোয়ারুজ্জামান জানান, ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত তিনি সিলেট ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করেন। পরে ১৪ আগস্ট ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে ১৭ আগস্ট লন্ডনে পৌঁছান। তিনি বলেন, “আমি সিলেট সিটির নির্বাচিত মেয়র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে সসম্মানে ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় দিয়েছিল এবং আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল।”
দেশত্যাগের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি আমার পাসপোর্ট ব্যবহার করেই লন্ডনে গেছি। ভারত হয়ে যাওয়ার খবর সঠিক নয়। রাইট চ্যানেল দিয়ে বৃটিশ পাসপোর্ট ব্যবহার করেই আমি লন্ডনে এসেছি।”
পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “জীবন বাঁচানো তখন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই আমি এবং আমার সহযোদ্ধাদের নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলাম।”
আনোয়ারুজ্জামান আরও জানান, দেশত্যাগের সময় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। তবে দেশ ছাড়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রায় ২৬০টিরও বেশি মামলা দেওয়া হয়।
গত ৮ নভেম্বর আনোয়ারুজ্জামান নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, “আমার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে মেয়র পদ থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর আক্রমণ ও নির্যাতন করা হয়েছে। তাই আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বিশ্বাস আমিই প্রথম এই প্রক্রিয়া শুরু করলাম। আরও প্রায় ১৫ হাজার ভিকটিম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করবেন।”
সর্ম্পকিত খবর:: সিলেটে বন্ধুর ক্ষুরের আঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ৬২ জন অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আব্দুল হান্নান, হাসিব আল ইসলাম এবং আবু বকর মজুমদারের নাম অভিযোগে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অভিযোগপত্রে প্রায় ৮০০ পৃষ্ঠার নথি সংযুক্ত করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন দলটির অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে যান বা দেশ ছাড়েন। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও এই প্রেক্ষাপটে লন্ডনে চলে যান।
এদিকে, সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের অভিযোগ ও তার পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরও কাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।