সিলেটে মাজার থেকে শিশু চুরি: ৪৮ দিন পর চোরকে শনাক্ত করলেন মা

Ayas-ali-Advertise
সিলেটে মাজার থেকে শিশু চুরি: ৪৮ দিন পর চোরকে শনাক্ত করলেন মা
ছবি-সংগৃহীত।
সিলেটে মাজার থেকে শিশু চুরি: ৪৮ দিন পর চোরকে শনাক্ত করলেন মা
ছবি-সংগৃহীত।
Facebook
Twitter
WhatsApp

সিলেটের হজরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকা থেকে দেড় বছরের শিশু সন্তান চুরির ঘটনার প্রায় ৪৮ দিন পর সন্দেহভাজন এক যুবককে শনাক্ত করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে গত ২৮ অক্টোবর ২০২৫, বিকাল সোয়া ৫টার দিকে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) আবারও মাজার প্রাঙ্গণে ওই যুবককে দেখতে পেয়ে শিশুটির মা কৌশলে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর ২০২৫ জকিগঞ্জ উপজেলার বাল্লা গ্রামের শাকিল আহমদের স্ত্রী রেহানা বেগম (২৮) হজরত শাহজালাল (র.) মাজারের মহিলা ইবাদতখানায় ইবাদত শেষে বের হন। সে সময় তার সঙ্গে ছিল দেড় বছরের কন্যা সন্তান সিনহা আক্তার তাবাসসুম। ইবাদতখানার সামনের উঠোনে এসে তিনি শিশুটিকে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে দেন।

কিছুক্ষণ পর হাঁটাচলার একপর্যায়ে হঠাৎ তার নজরে আসে, এক যুবক তার মেয়েকে কোলে নিয়ে দ্রুত সরে যাচ্ছে। তিনি চিৎকার করে তাকে ধরতে ছুটে গেলেও মুহূর্তের মধ্যেই ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায় ওই যুবক।

এই ঘটনার পর থেকেই রেহানার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সন্তান হারানোর পর স্বামী তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। বাবার বাড়িতে আশ্রয় মিললেও মানসিক যন্ত্রণায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। সন্তান হারানোর বেদনা তাকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে বাধ্য করে। তিনি নিয়মিত হজরত শাহজালাল (র.) মাজার প্রাঙ্গণে অবস্থান করতেন এবং আল্লাহর দরবারে সন্তানের ফিরে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করতেন। এছাড়া এ ঘটনায় তিনি সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

প্রায় দেড় মাস পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) আবারও মাজার প্রাঙ্গণে অবস্থান করছিলেন রেহানা। এ সময় আশপাশের শিশুদের দিকে তাকিয়ে নিজের মেয়ের কথা ভাবছিলেন তিনি। হঠাৎ এক যুবক তাকে অশ্লীল ইঙ্গিত করে কাছে ডাকলে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়—এই যুবকই তার মেয়েকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল।

তিনি কৌশলে ওই যুবককে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের কাছে নিয়ে যান এবং আশপাশের লোকজনকে বিষয়টি জানান। পরে স্থানীয়রা যুবকটিকে আটক করে। রেহানা অন্যের মোবাইল ব্যবহার করে তার জিডির তদন্ত কর্মকর্তাকে ফোন করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে যুবকটিকে হেফাজতে নেয়।

আটক যুবকের নাম মো. আলী (২৭)। তিনি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার নোয়াপাড়া এলাকার হেলাল মিয়ার ছেলে। কাজের সুবাদে তিনি হবিগঞ্জে বসবাস করতেন।

রেহানা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মো. আলী স্বীকার করেছেন—শিশুটি বর্তমানে তার স্ত্রী জেছমিনের (২৫) কাছে রয়েছে। তারা নিঃসন্তান হওয়ায় শিশুটিকে লালন-পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে তিনি স্বীকারোক্তি দেন।

ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রেহানা বলেন, ‘ওদের সন্তান নেই বলে কি আমার সন্তান নিয়ে যাবে? পুলিশ আমাকে আশ্বাস দিয়েছে।’

তিনি আরও জানান, নিজের সন্তানকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। স্বামীর মোবাইল বন্ধ থাকলেও বাবাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈনুল জাকির বলেন, ‘আটক ব্যক্তি আমাদের হেফাজতে রয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম চলমান। বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।’

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪