বাংলাদেশ থেকে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি জানাতে জাপানের ব্যবসায়িক সংগঠন ‘ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস’ (এনবিসিসি)-এর প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি-সংক্রান্ত মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
৬৫টিরও বেশি কোম্পানি নিয়ে গঠিত জাপানের এই ব্যবসায়িক ফেডারেশন সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওআই) স্বাক্ষর করেছে, যার লক্ষ্য জাপানে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন ও কর্মসংস্থানের জন্য একটি কাঠামো গড়ে তোলা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (টিআইটিপি) এবং স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার্স (এসএসডব্লিউও) কর্মসূচির আওতায় এক লাখেরও বেশি কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিনিধিদল জানায়, সমঝোতা স্মারকের আওতায় প্রথম ধাপে আগামী বছর দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে নির্মাণ, সেবা, অ্যাভিয়েশন, গার্মেন্টস ও কৃষি খাতে কর্মীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আগামী দিনে গাড়িচালক, অটোমোবাইল ও রিসাইক্লিং খাতেও দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন বাড়বে বলে তারা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে খুলনা ও গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সম্ভাব্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এনবিসিসি প্রতিনিধিদল কেন্দ্র দুটি পরিদর্শন করেছে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা প্রশিক্ষণের মান সম্পর্কে খোঁজ নেন এবং কোনো ঘাটতি রয়েছে কি না জানতে চান।
প্রতিনিধিদলের প্রধান ও এনবিসিসি চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা বলেন, ‘গত মার্চ মাসে আমি ট্রেনিং সেন্টার দুটি পরিদর্শন করেছিলাম। এবার এসে দেখছি, সাত মাসের মধ্যেই অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। আশা করছি, আগামী বছরই দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে পারব।’ তবে তিনি বলেন, প্রশিক্ষকদের ভাষাগত দক্ষতা আরও উন্নত করা গেলে ফলাফল আরও ভালো হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভাষাগত দক্ষতা অর্জনই বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়া যেতে পারে, যাতে জাপানের শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নিতে পারেন। পাশাপাশি জাপান থেকে প্রশিক্ষকদের এনে স্থানীয় প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি নারীরা অত্যন্ত পরিশ্রমী ও যত্নশীল। কেয়ারগিভিং সেক্টরে তাদের দক্ষতা প্রশংসনীয়। সঠিক প্রশিক্ষণ ও ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করলে তারা জাপানের কেয়ারগিভিং সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।’
প্রধান উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছুটা কঠিন মনে হলেও, একবার প্রশিক্ষণ পেলে বাংলাদেশের মেয়েরা নিজেরাই অন্যদের শেখাতে পারবে। একবার কর্মী পাঠানো শুরু হলে অন্যরাও আগ্রহী হবে।’
এনবিসিসি প্রতিনিধিরা জানান, আগামী কয়েক বছরে জাপানে ৪ লাখেরও বেশি দক্ষ নার্সের প্রয়োজন হবে। তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি নার্স নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকার জাপানে কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যালোচনা করছে।’ তিনি জানান, এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে এবং কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানে মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে।
আরোও পড়ুন:: বিশ্বনাথে ‘আবাবিল’র প্রবাসী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন









