জাপানে যাবে এক লাখ কর্মী, প্রশিক্ষণ দেবে জাপানিরাই

Ayas-ali-Advertise
জাপানে যাবে এক লাখ কর্মী, প্রশিক্ষণ দেবে জাপানিরাই
জাপানে যাবে এক লাখ কর্মী, প্রশিক্ষণ দেবে জাপানিরাই
Facebook
Twitter
WhatsApp

আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিতে চায় জাপান। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে। কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ভাষাশিক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে। প্রশিক্ষণ দেবেন জাপানের প্রশিক্ষকেরাই। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিরা বিনা খরচে জাপান যেতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিষয়টি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক জাপান সফরে জাপান সরকার এক লাখ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে। এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

গত ২৯ মে টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিএমইটি এবং তিনটি জাপানি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়। একটি স্মারকে স্বাক্ষর করে বিএমইটি ও কাইকম ড্রিম স্ট্রিট (কেডিএস)। অন্যটি স্বাক্ষরিত হয় বিএমইটি, এনবিসিসি (জাপানের ৬৫টির বেশি কোম্পানির একটি ফেডারেশন) ও জাপান-বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সির (জেবিবিআরএ) মধ্যে।

প্রশিক্ষণ নরসিংদীতে, নেওয়া হবে দক্ষতা পরীক্ষা

সমঝোতা অনুযায়ী, জাপানের প্রশিক্ষকেরাই বাংলাদেশে এসে প্রশিক্ষণ দেবেন। নরসিংদীর মনোহরদীর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (টিটিসি) কর্মীদের জাপানি ভাষা ও নির্দিষ্ট খাতে দক্ষ করে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে নেওয়া হবে ‘স্পেসিফায়েড স্কিল ওয়ার্কার টেস্ট (এসএসডব্লিউ)’। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর্মীরাই জাপানে যেতে পারবেন, তাও বিনা খরচে।

বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ‘জাপানের পক্ষ থেকেই প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, আমরা সে অনুযায়ী এক লাখ কর্মী তৈরি করব। যদিও এটি বড় চ্যালেঞ্জ, তবে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

প্রশিক্ষণের খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, এখনো চুক্তির কপি হাতে আসেনি। স্কিল কী কী হবে, সেটাও তখনই জানা যাবে।

বিএমইটির প্রশিক্ষণ পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সালাহউদ্দীন জানান, প্রাথমিকভাবে নরসিংদীর কেন্দ্রকে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করা হয়েছে। পরে দেশের অন্যান্য টিটিসিতেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে পারে।

অল্পসংখ্যক কর্মী গেলেও রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জাপানে গেছেন মাত্র ৫,০১৪ কর্মী। বর্তমানে ৯৬টি অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে বছরে কর্মী পাঠায় মাত্র ৩০টি।

২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইএম জাপান প্রকল্পের মাধ্যমে গেছেন ৭০২ জন। যদিও কর্মী সংখ্যা কম, তবে জাপান থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেশ ভালো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাপান থেকে ৬৪.৯৯ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছরে ছিল ১১২.৯৯ মিলিয়ন ডলার।

দুর্বলতা ভাষা ও দক্ষতায়

মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, জাপানে যেতে হলে কর্মীদের জাপানি ভাষা ও নির্দিষ্ট দক্ষতা থাকা বাধ্যতামূলক। এই দুটি দিকেই অনেকের ঘাটতি থাকায় কম কর্মী যেতে পেরেছেন। জাপান খুব কঠোর, সেখানে অদক্ষ শ্রমিকের কোনো সুযোগ নেই।

অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাষা শেখানো হলেও অনেকেই পরীক্ষার সময় ঝরে পড়ে। তাই ভাষা শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হবে। টিটিসিগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কোটা পূরণ করতে হলে প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।’

টোকিওতে গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জাপানে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এটি শুধু কাজের সুযোগ নয়, জাপানকে জানার পথও খুলে দেবে।”

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪