সৌদিতে ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

Ayas-ali-Advertise
সৌদিতে ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার
সৌদিতে ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার।
সৌদিতে ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার
সৌদিতে ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার।
Facebook
Twitter
WhatsApp

সৌদি আরবের দাম্মামে ফ্ল্যাট থেকে গাজীপুরের দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রবাসী জীবনের স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমালেও শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাদের। নিহতের নাম কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও তার ছোট ভাই কামরুল ইসলাম সাগর (২২)।

বুধবার (২১ মে) দাম্মামের ওই ফ্ল্যাট থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সৌদি পুলিশ। নিহত দুই ভাই গাজীপুরের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার বাসিন্দা এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে।

পরিবার সুত্রে জানান, রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশির ফোনে তিনি দুই ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। পরে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে নিশ্চিত হন, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে তার দুই ছেলে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। দুপুরের পর ফ্ল্যাটের দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে বাড়ির মালিক পুলিশে খবর দেন।

সৌদি পুলিশ ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মঞ্জু নামে এক বাংলাদেশিকে শনাক্ত করেছে। পবিরারের দাবি, ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিনই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং তিনি মঞ্জুকে ব্যবহার করে তাদের খুন করিয়েছেন।

নিহতের পিতা মোশারফ হোসেন জানান, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বড় ছেলে কাকনকে কানাডায় পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বাহার উদ্দিন তাকে ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে কানাডায় চাকরির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন। প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ টাকা নেওয়া হলেও পরে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এরপর বাহার ছোট ছেলে সাগরকে সৌদি আরবে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সাগরকে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদিতে পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছে কাজ না দিয়ে তাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয় এবং পুনরায় আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয়। মোশারফ হোসেন সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে টাকা পাঠাতে বাধ্য হন। কিন্তু সাগরকে ভালো চাকরি না দিয়ে দেওয়া হয় খাবার ডেলিভারির কাজ।

এ অবস্থায় মোশারফ কাকনকে কানাডায় পাঠানোর জন্য দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে, বাহার তাকে ও তার দুই ছেলেকে সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনের চাকরির আশ্বাস দেন। এ জন্য আবারও ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন এবং কাকনকে ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর সৌদি নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েও দুই ভাইকে কাজ না দিয়ে একটি ছোট ঘরে আটকে রাখা হয়।

এ ঘটনার পর বাহার মোশারফ হোসেনকে উমরাহ ভিসায় সৌদিতে গিয়ে ছেলেদের দেখে আসার প্রস্তাব দেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তিনি সৌদি গিয়ে ছেলেদের সঙ্গে দেখা করে ফিরে আসেন। ছেলেরা তাকে জানায়, তারা অমানবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না, ঘর ছেড়ে বের হতে দেওয়া হয় না, আর কাজও দেওয়া হয়েছে খাবার সরবরাহের।

ফেরার সময় বাহার মোশারফ হোসেনকে একটি পলিথিন মোড়ানো ব্যাগ দিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দিতে বলেন। সৌদি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের তল্লাশিতে ব্যাগে থাকা একটি পুটলি জব্দ করা হয়। দেশে ফিরে আসার পর বাহার সেই পুটলি ফেরত চেয়ে বলেন, সেখানে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল। এরপর মোশারফের ওপর চাপ সৃষ্টি শুরু হয়।

তিনি জানান, বাহার তাকে বারবার হুমকি দিতে থাকেন, যদি টাকা না দেওয়া হয় তাহলে সৌদিতে থাকা দুই ছেলেকে ক্ষতি করা হবে। এমনকি মোশারফ হোসেনের নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।

সবশেষ, ৯ মে একটি মাইক্রোবাসে করে কিছু দুর্বৃত্ত এসে গাজীপুর শহরের বাসায় হামলার চেষ্টা করে। মোশারফ বাড়িতে না থাকায় দুর্বৃত্তরা তার বৃদ্ধ পিতা আবুল কাশেম লম্বরিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তুলে নিয়ে যায় এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় মোশারফ হোসেন গাজীপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এবং দুই ছেলের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪