২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বিএনপির তৎকালিন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ্য এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর ২৩ এপ্রিল সিলেটের বিশ্বনাথে অনুষ্ঠিত উপজেলা বিএনপির মিছিলে হামলার অভিযোগ এনে প্রায় ১৩ বছর পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুনু মিয়া, বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান, বিশ্বনাথ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদসহ বিশ্বনাথের ১০৫ আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে সিলেটের আদালতে মামলা (বিশ্বনাথ সিআর মামলা নাম্বার ১৭৭/২০২৫) দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) সিলেটের ৩ নাম্বার আমলি আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামের মৃত আছলাম আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান। মামলায় আরও ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বিএনপির তৎকালিন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর তাঁর সন্ধানের দাবিতে ২৩ এপ্রিল বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিশ্বনাথে মিছিল বের করলে মিছিলটি স্থানীয় বাসিয়া ব্রিজের উত্তরপাড়ে রামপাশা রোডে পৌছামাত্র শফিকুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযুক্তরা মিছিলে হামলা করে। এ সময় পুলিশ ও হামলাকারীদের গুলিতে বাদীর ভাতিজাসহ মিছিলকারী অনেকেই গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। এরপর আহতরা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মৌলভীবাজার জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থানে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন মামলা দায়েরের সুযোগ না পেয়ে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করেছে বাদী।
দীর্ঘদিন মামলা দায়েরের সুযোগ না পেলেও ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কারণে বাদী আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, বিশ্বনাথ পৌরসভার সাবেক মেয়র মুহিবুর রহমান, রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুনু মিয়া, বিশ্বনাথ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) চাঁন মিয়া, উপপরিদর্শক (এসআই) মনোজ কান্তি, আব্দুল আলিম, নজরুল ইসলাম, দেব দুলাল, এনাম, বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান, দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম মতছিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইরন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক মখদ্দছ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আজিজ সুমন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান সুইট, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এএইচএম ফিরোজ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিক হাসান, মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজের অধ্যক্ষ নেহারুন নেছা, বিশ্বনাথ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ফজর আলী, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আরশ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কবির আহমদ কুব্বার, উপজেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি শংকর দাস শংকু, বিশ্বনাথ পুরান বাজারের ব্যবসায়ী সমরেন্দ্র বৈদ্য সমর, বিশ্বনাথ সাব-রেজিস্টারি অফিসের দলিল লেখক রিপন চন্দ্র দাশ, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল জালাল, যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন, মহব্বত আলী জাহান, বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক, রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এনামুল হক এনাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পার্থ সারথী দাস পাপ্পু, সহসভাপতি সালমান আহমদ রব্বানী, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ছোরাব আলী, সহসভাপতি মারফত আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান বদরুল, উপজেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি শাহজাহান সিরাজ, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বদরুল আলম, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শংকর চন্দ্র ধর, সিলেট জেলা তরুণ লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ বাবুল, বিশ্বনাথ ক্রিকেট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মিজাজুল হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আশিক আলী, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সিতার মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ফয়জুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রফিক আলী, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ, দৌলতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফ উল্লাহ সিতাব, রামপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, সিলেট ল’ কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি আব্দুল বাতিন, জাহারগাঁও গ্রামের ওয়ারিছ খান, ফিরোজ খান, সাতপাড়া গ্রামের আলী আহমদ, আমির আলী, ধনপুর গ্রামের ওয়াহাব আলী, জানাইয়া গ্রামের জুনাব আলী, শফিক মিয়া, শাহ আলম খোকন, খায়রুল মিয়া, শাহিন আহমদ, রাজন আহমদ, আব্দুর রব, আজিজুর রহমান আইজু, মৌলভীগাঁও গ্রামের মাহফুজুর রহমান, আব্দুল মনাফ, লোকমান মিয়া, তাহমিদ আহমেদ নাদেল, জয়নাল আবেদীন, সাব্বির আহমদ, জগদিশপুর গ্রামের নজির আহমদ, নাজমুল ইসলাম, দোহাল গ্রামের জামাল আহমদ, বিশ্বনাথ নতুন বাজারের আল-হেলাল, বড় খুরমা গ্রামের হিরা মিয়া, দশপাইকা গ্রামের জুনাব আলী, শিমুলতলা গ্রামের আব্দুল হান্নান তোতা, শাহজিরগাঁও গ্রামের শানুর আলী, রুপালী, কাদিপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার, লামারচক কাদিপুর গ্রামের শানুর আলী, শহিদ আহমদ, শ্রীপুর গ্রামের দুদু মিয়া, কাদিপুর গ্রামের আব্দুল হক, শিমুলতলা গ্রামের কামরুল ইসলাম, সখিপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান, মীরেরচর-১ গ্রামের আব্দুল করিম, মোল্লারগাঁও গ্রামের সিতাব আলী, ইলামেরগাঁও (আটঘর) গ্রামের লোকমান আলী, হরিকলস গ্রামের নোয়াব আলী, মীরেরগাঁও গ্রামের আবুল কালাম, কেশবপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম, কামালপুর গ্রামের বাবুল মিয়া, নরশিংপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিন, আমতৈল গ্রামের মুহিবুর রহমান, বাইশঘর গ্রামের শিবিল আহমদ শিবলি, কোনাউরা নোয়াগাঁও গ্রামের শানুর আলী, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মঞ্জুর আলী।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাসান পাটোয়ারী রিপন জানান, আদালত বিশ্বনাথ থানা পুলিশকে মামলাটি তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্বনাথ থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী বুধবার (৭ মে) রাত ১০টায় জানান, আদালত থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা থানায় পৌঁছায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর ২৩ এপ্রিল বিশ্বনাথে পুলিশ, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় তিনজন বিএনপি কর্মী নিহত হন এবং শতাধিক মানুষ আহত হন।
আরও পড়ুন:: বিশ্বনাথে স্কুলে হামলার মামলায় ৪ পলাতক আসামি কারাগারে।