মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মোদাব্বির আলী মানিক মিয়া আর নেই। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) পবিত্র শবে কদরের রাতে ইফতার শেষে কিছুক্ষণ পর সিলেট নগরের খাদিমনগরে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি
দুনিয়াতে তিন ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) বাদ জুমা তাঁর নিজ গ্রাম বিশ্বনাথ উপজেলার ধর্মদা গ্রামে শাহ আজমত আলী (রহ.) জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বিশ্বনাথ আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা নু’মান আহমদ। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমদ, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দয়াল উদ্দিন তালুকদার, সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিজানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ।
১৯৪৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ধর্মদা পীরবাড়ী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহ মোদাব্বির আলী মানিক মিয়া। তাঁর পিতা ছিলেন মরহুম শাহ মমতাজ আলী এবং মাতা তৈয়বুন্নেছা খানম।
তিনি ধর্মদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৯৬০ সালে রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬৩ সালে এমসি কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৬৫ সালে বিএ ডিগ্রি অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভের পর সিলেট জেলা বারে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমসি কলেজ ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সদস্য (১৯৬৩) এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ১৯৭৩-৭৮ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি সাংবাদিকতায়ও সম্পৃক্ত ছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাকের ঢাকা অফিসে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘জয়বাংলা (পূর্বাঞ্চল)’ ও ‘সোনার বাংলা’ নামে দুটি পত্রিকা।
আইন পেশার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাতৃমঙ্গল হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ব্লু-বার্ড হাইস্কুল ও ভোলানন্দ নৈশ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদক এবং সিলেট ল কলেজ ও সরকারি কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালে রওশন আরা বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাহ মোদাব্বির আলী মানিক মিয়া। তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক।
আরও পড়ুন:: বিশ্বনাথে খাজাঞ্চী ইউনিয়ন ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ২য় ধাপে অর্থ উপহার প্রদান।