তীব্র চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা একেবারে তলানীতে পৌঁছেছে সিলেটের বিশ^নাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। একই চিত্র ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসমূহেও। ফলে, দিনের পর দিন কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে শতশত রোগীদের। পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
প্রায় ৬ বছর পূর্র্বে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া সিলেটের বিশ^নাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামো ও প্রশাসনিক অনুমোদন মিললেও এখনো পদ সৃজন হয়নি ৫০ শয্যার। ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে কার্যক্রম।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এর আওতাধীন ৮ ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসমূহে চিকিৎসকের পদ ১৮টি। এর মধ্যে ১০টি চিকিৎসক পদ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু, ১০টির মধ্যে ৫টি পদই রয়েছে শূন্য। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ১ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিওলজি) ১ জন, মেডিকেল অফিসার ১ জন এবং ডেন্টাল সার্জন ১ জন। ৮ ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রসমূহের ৮টি চিকিৎসক পদের মধ্যে আছেন শুধুমাত্র উপজেলার দেওকলস ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারী সার্জন ১ জন।
সূত্র আরও জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু, চিকিৎসক সংকট থাকায় মাত্র ২ জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে ১ জন মেডিকেল অফিসার দিয়েই জরুরী বিভাগ এবং অন্তঃবিভাগের পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের রোগীর সেবা প্রদানের পাশাপাশি বহির্বিভাগেও সেবা দিতে হচ্ছে। তবে, ওই মেডিকেল অফিসার দিয়ে জরুরী বিভাগের ৩টি শিফটের জরুরী ডিউটি রোস্টার ভিত্তিক সেবাদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও, প্রতিনিয়ত সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনসহ মেজর ও মাইনর অপারেশন বিশেষ করে হার্নিয়া-এপেন্ডিসাইটিস রোগের অপারেশন চলমান থাকলেও পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসারের অভাবে এর ধারাবাহিকতা রক্ষাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে লম্বা লাইন ধরে দাড়িয়ে আছেন শতশত রোগী। কিন্তু, ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও তাদের বেশি ভাগই পাচ্ছেন না চিকিৎসাসেবা। ১ জন মাত্র মেডিকেল অফিসার এত রোগীর সেবা দিতে গিয়ে রীতিমত হিমশীম খাচ্ছেন। লাইনে দাড়িয়েও চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়িতে ফিরে যেতেও দেখা যায় বহু রোগীকে। এমনকি দেখা যায়, চিকিৎসক সংকটের কারণে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা এক রোগীকেও ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে।
বহির্বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, ‘প্রতিদিন আমাদের মত শতশত মানুষ চিকিৎসা নিতে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। কিন্তু এখানে ১ জন মাত্র ডাক্তার। তিনি সব রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন না। যার ফলে আমাদের মত অনেককেই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যার অবকাঠামো ও প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও এখনো পদ সৃজন হয়নি। এক বছর পূর্বে পদ সৃজনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। পদ সৃজনের পর চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলাবাসীকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।’
আরোও পড়ুন:: বিশ্বনাথে গ্লোবাল ‘ল’ সলিসিটর ইউকে’র উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ।