আব্বাস হোসেন ইমরান :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় মাত্র দেড় মাসের মধ্যে ২টি হত্যা, ১টি গণধর্ষণ ও ৫টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ২টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, গত ২৩ জুন উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের মনুকোপা গ্রামে পূর্ব বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মখলিছ মিয়া (৬৫) ও ওয়ারিছ আলী (৭০) নামে দু’পক্ষের দু’জন নিহত হন। নিহত ওয়ারিছ আলীর স্ত্রী নুরুন্নেছা বাদী হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলু মিয়াসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামী রেখে থানায় মামলা (নং ১৫, তারিখ ২৪/৬/২০২০ইং) দায়ের করেন। পরে ওইদিনই নিহত মখলিছ মিয়ার পুত্র আকরাম হোসেন বাদী হয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেলসহ ৩১ জনকে আসামী করে পাল্টা মামলা (নং ১৬) দায়ের করেন। ইউপি সদস্য ফজলু মিয়াসহ উভয় মামলার একাধিক আসামীকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে, গত ১ জুলাই উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামের ১৮ বছরের এক পিতৃহারা তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনার ১২ দিন পর তরুণী বাদী হয়ে থানায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২ জনকে অজ্ঞাত আসামী রেখে মামলা (নং ১১, তারিখ ১৩/৭/২০২০ইং) করেন। মামলা দায়েরের পর গণধর্ষণকান্ডের মূলহোতা ইসবপুর গ্রামের মন্নান মিয়ার পুত্র আনোয়ার মিয়াকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও অপর দুই আসামী একই গ্রামের রিয়াছদ আলীর পুত্র সুজন মিয়া (৩০) ও মৃত ফজর আলীর পুত্র শায়েস্তাবুর মিয়াকে (৩০) এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
গত ২ জুলাই উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের শেখেরগাঁও গ্রামের জামিল আহমদের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের (২১) ঝুলন্ত লাশ বসতঘরের পেছনের রুম থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। তবে, ফাতেমার বড়ভাই রুবেল দাবি তুলেন, এটি আত্মহত্যা নয়, ফাতেমাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ৬ জুলাই হারপিক পান করে ৮ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অফিস সহকারী এবং বাহাড়া-দুবাগ গ্রামের ফজলুর রহমানের স্ত্রী আসমা শিকদার সিমলা (৪০)। এই আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে দৌলতপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রউফ, সদস্য আনোয়ার মিয়া ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিম উদ্দিনকে আসামী করে থানায় মামলা (নং ৬, তারিখ ৯/৭/২০২০ইং) দায়ের করেন আসমার স্বামী ফজলুর রহমান। মামলা দায়েরের পূর্বে অভিযুক্ত আনোয়ার মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে থানায় নেয়া হয়। মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
২৭ জুলাই নিজ বসতঘরে সিলিং ফ্যানের সাথে লুঙ্গি দিয়ে ফাঁস নেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের কারিকোনা গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে ওমান ফেরত বাবলা মিয়া (৩০)। এ ঘটনায় তার ছোট ভাই নাঈম মিয়া বাদী হয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। সর্বশেষ, গতকাল ৮ আগস্ট দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে কোনো এক সময় বসতঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁস নেন উপজেলা খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তবলপুর গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী লুৎফা বেগম (২৭)। এ ঘটনায় তার ভাই থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
একইদিন বিকেলে উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত ইছমাইল আলীর পুত্র সাবেক ফুটবলার আনোয়ার মিয়া (৫৬) বিষপান করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার ভোরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে মারা যান তিনি।
কথা হলে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) শামীম মূসা বলেন, হত্যা-গণধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার প্রেক্ষিতে আমরা আইনী পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি, আত্মহত্যা রোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও আমরা কাজ করছি।