দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশে পাঠের জন্য পুনরায় চালু করা হয়েছে আগের সময়ের পরিচিত শপথবাক্য। এতে বাদ পড়েছে পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে যুক্ত হওয়া ‘মুক্তিযুদ্ধ’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ ও ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে না দেওয়ার’ মতো বিষয়বস্তু। তবে নতুনভাবে যোগ হয়েছে অন্যায় ও দুর্নীতিবিরোধী দুটি বাক্য।
বুধবার (২১ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেখানে জানানো হয়, সাম্যের বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এই শপথ প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় সংগীতের পর পাঠ করানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
নতুনভাবে নির্ধারিত শপথে বলা হয়েছে—
আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিবো। দেশের প্রতি অনুগত থাকিবো। দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিবো। অন্যায় ও দুর্নীতি করিবো না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিবো না।
হে মহান আল্লাহ/মহান সৃষ্টিকর্তা, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ, বৈষম্যহীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়িয়া তুলিতে পারি। আমিন।”
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারিকৃত এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও দেশের সব জেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরপ্রধানদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে শপথবাক্য চালু করেছিল, তাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছিল।
ওই শপথবাক্যে ছিল—
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আমি দৃপ্তকণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।
দেশকে ভালোবাসবো, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে শক্তি দিন।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০ আগস্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পুরনো শপথবাক্য পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআইগুলোতে। সেই শপথেও ‘দেশের প্রতি আনুগত্য’, ‘মানবসেবা’ ও ‘রাষ্ট্র গঠনে অংশগ্রহণের’ অঙ্গীকার ছিল।
সর্বশেষ সংস্করণে এবার যুক্ত হয়েছে—“অন্যায় ও দুর্নীতি করিবো না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিবো না”—এই দুটি প্রত্যয়, যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা ও সততার চর্চা উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অর্ধলাখ শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তুতি, শূন্যপদের তালিকা চেয়েছে অধিদপ্তর।