Search
Close this search box.

বিশ্বনাথে ঐতিহ্যের ‘পলো বাওয়া’ উৎসব উদযাপিত

Facebook
Twitter
WhatsApp

এমদাদুর রহমান মিলাদ :: সিলেটের বিশ্বনাথে ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের (বড়) বিলে এ পলো বাওয়া উৎসব পালিত হয়।

শিকড়ের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের টানে প্রতি বছরই আয়োজন করা হয় এই উৎসবের। বাঁশ আর বেতের সমন্বয়ে তৈরী করা পলো ও উড়াল-চিটকি-ঠেলা জাল দিয়ে শীত উপেক্ষা করে এক সাথে মাছ শিকার করাই গ্রামবাসীর প্রধান এক আনন্দের উৎসব। তাই আনন্দের ওই উৎসব পালন করতে প্রতি বছর মাঘ মাসের অপেক্ষায় থাকেন গ্রামবাসী।

গোয়াহরি গ্রামের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রায় দু’শত বছর ধরে বাংলা বছরের প্রতি মাঘ মাসের পহেলা তারিখে এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পলো বাওয়াকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। এতে অংশগ্রহন করেন গ্রামের কয়েক শতাধিক সৌখিন মৎস্য শিকারী।

সরেজমিন বিলে গিয়ে দেখা যায়, কনকনে শীত উপেক্ষা করে সাতসকালেই বিলের ধারে জড়ো হয়েছেন শিকারীরা। এতে দলভুক্ত হয়েছে শিশু-কিশোরও। মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম পাশে নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের প্রহর গুনছেন সকলেই। সময় হলেই একযোগে ‘আনন্দ চিৎকার’ দিয়ে বিলে নামার অপেক্ষায় সবাই। উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে বিলের ধারে ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক জনতা। সকাল ১১টা হলেই ভূ-দৌড়ে পলো নিয়ে বিলে ঝাপ দেন শিকারীর দল। দীর্ঘসময় হীম শীতল জলে মাছ শিকারে মেতে উঠেন তারা। ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে চলতে থাকে পলো পাওয়া। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী এ ‘পলো বাওয়া উৎসবে’ অংশ নেন গোয়াহরি গ্রামের সব বয়সী পুরুয়। এসময় সৌখিন শিকারীদের পলোতে ধরা পড়ে বোয়াল, রুই, কাতলা, শোল, গজার ও বাউশ মাছ। এছাড়াও জাল দিয়ে ঘোলা জলে উপরে ভেসে উঠা প্রচুর টেংরা-পুঁটিও ধরা হয়। একেকটি মাছ শিকারের সাথে সাথে চিৎকার করে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করেন শিকারীরা। তাদের ওই আনন্দের সাথে তাল মেলান বিলের তীরে অপেক্ষমান গ্রামের মুরব্বী, মহিলা ও শিশুরা। দূর থেকে আসা অনেকের আত্বীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিলের পাড়ে। শুধু তাই নয় গ্রামের অনেক প্রবাসীরাও দেশে এসে এই উৎসবে অংশ নেন।

গ্রামবাসীরা জানান, পলো বাওয়া উৎসব গোয়াহরি গ্রামের একটি ঐতিহ্য। গ্রামবাসী পূর্বপুরুষের আমল থেকে এই উৎসব পালন করে আসছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্তনুযায়ী ভাদ্র মাস থেকে বিলে সকল প্রকার মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এতে বিলে জড়ো হয় বিভিন্ন জাতের প্রচুর মাছ। এই পাঁচ মাসে মাছ গুলো সুযোগ পায় বড়ো হওয়ায়ও। ‘পলো উৎসব’র এক সপ্তাহ পূর্বে পঞ্চায়েতের সভা ডেকে সৃংঙ্খলা রক্ষায় নেয়া হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সভার পরপরই উসৎসবের ন্যায় গ্রামের ঘরে ঘরে পলো তৈরী, মেরামত ও সংগ্রহের কাজ চলে। এরপর মাঘ মাসের পহেলা দিনেই আনুষ্ঠানিক ভাবে একযোগে সবাই মাছ ধরতে বিলে নামেন।

পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবের আমেজ রিবাজ করছিল। এই উৎসব চলবে ১৫দিন পর্যন্ত। তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর ২য় ধাপে পলো বাওয়া হবে। এই পনের দিনের ভিতরে প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার বিলে হাত দিয়ে মাছ ধরা হবে এবং কেউ চাইলে ছোট ছোট জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোয়াহরি গ্রামের গোলাম হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলায় এটিই সব’চে বড় ‘পলো বাওয়া উৎসব’। যুগযুগ ধরে এ ঐতিহ্য চলমান। আমরা গ্রামবাসীরা মিলেমিলে প্রতিবছর এ বিল থেকে উৎসবের মতো দেশীয় প্রজাতির সু-স্বাদু আহরণ করে থাকি।

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪

আরও খবর

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত