একই গ্লাসে সাত স্তরে সাত রঙের চায়ের কথা অনেকেরই জানা। এ চা জিভে জলের বদলে বিস্ময় জাগায় বেশি। শৈল্পিক ও আকর্ষণীয় এ চায়ের নামডাক অনেক আগেই বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে গেছে। শ্রীমঙ্গলে যারা বেড়াতে আসেন তারা সাতরঙা চায়ের স্বাদ নিতে ভুলেন না।
রমেশ রাম গৌড় (৪২) প্রায় ১২ বছর ধরে সপ্তবর্ণের এ চা বানিয়ে যাচ্ছেন। তার দুইটি দোকান রয়েছে- শ্রীমঙ্গলের মণিপুরী অধ্যুষিত রামনগর ও কালিঘাট রোডের ১৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ক্যান্টিনে। তার দোকান দুটির নাম নীলকণ্ঠ কেবিন।
তিনি নিজে সাত স্তরবিশিষ্ট চায়ের আবিষ্কারক দাবি করে জানান, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার আটানিবাজারে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অংশীদার ছিলেন। কিন্তু অংশীদার পুরো টাকা আত্মসাৎ করে। ফলে ভাগ্য বদলের উদ্দেশ্যে ২০০০ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে শ্রীমঙ্গলে চলে আসেন। সঙ্গে ছিল মাত্র দেড় হাজার টাকা। রামনগর মণিপুরী পাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে শহরের নতুন বাজারে একটি দোকানে চাকরি নেন।
ওই বছরের আগস্ট মাসে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) সংলগ্ন কাকিয়াছড়া চা বাগানে একটি চায়ের দোকান দেন। এরপর নিবিড়ভাবে চিন্তা ও পরিশ্রম করে ২০০২ সালে একই গ্লাসে দুইরঙা চা আবিষ্কার করে শ্রীমঙ্গলে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। ধীরে ধীরে চায়ের স্তর বাড়াতে শুরু করেন। বর্তমানে এটি সাত স্তরে সাত রঙে এসে দাঁড়িয়েছে।
সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে। ইতোমধ্যে লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইতালি থেকে ভালো অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চাকরির প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি দুটি দোকানের মালিক। জীবনমানে এসেছে পরিবর্তন। ছেলেদের নিয়ে তিনি পর্যায়ক্রমে দোকান দুটি দেখাশুনা করেন। রামনগরের দোকানে সাত স্তরের চা প্রতিদিন গড়ে ৩০ কাপ বিক্রি হয় ও কালিঘাটের দোকানে গড়ে ৫০ কাপ চা বিক্রি হয়। তিনি জানান, সরকারকে নিয়মিত ভ্যাট প্রদান করে থাকেন।
তিনি আরও জানান, ক্লোন টি ও বিভিন্ন ধরনের মসলার সংমিশ্রণে এ চা তৈরি করেন। বর্তমানে সাত স্তরের চা ৭০ টাকা, ছয় স্তরের ৬০ টাকা, পাঁচ স্তরের ৫০ টাকা, চার স্তরের ৪০ টাকা, তিন স্তরের ৩০ টাকা, দুই স্তরের চা ২০ টাকা, হাই স্পেশাল চা ২০ টাকা, স্পেশাল দুধ চা ১০ টাকা, গ্রিন চা ৫ টাকা, আদা চা ৫ টাকা, লাল চা ৫ টাকা এবং লেবু চা ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উন্নত বিশ্বে বাঙালি ও ভারতীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে ‘ফ্লোডা কফি’ নামে এক ধরনের কফি তৈরি করা হয়। এ কফি তৈরিতে একটি মগে ৪-৫ চামচ চিনি ও ফুলক্রিম দুধ ব্যবহার করা হয়। এ কফিতে দুধ ও কফি পৃথক রং ধারণ করে থাকে। সেখানে চিনির মাত্রা বেশি হয়। তবে শ্রীমঙ্গলের সাত রঙের চায়ের প্রস্তুত প্রণালী অজানা। তবে দেখতে যতটুকু আকর্ষণীয়, তত সুস্বাদু নয়। রেসিপির খানিকটা ফাঁস করে জানান, সাত স্তরের চা তৈরি করতে চা পাতার লিকার বেশি সময় ধরে জাল দিতে হয়।
নীলকণ্ঠ কেবিনে কিভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সায়েদাবাদ অথবা ফকিরাপুল থেকে বাসে চড়ে শ্রীমঙ্গল নামবেন। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে রিকশা নিয়ে কালিঘাট রোডের কিছুদূর গেলেই দেখতে পাবেন বড় সাইনবোর্ডে লেখা ‘নীলকণ্ঠ’। ভাড়া নেবে ১০ টাকা। কেবিনটি ১৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ক্যান্টিনে থাকায় সব ধরনের নিরাপত্তা পাবেন। নিরিবিলি ও খোলামেলা জায়গায় ভেতরে বা বাইরে বসে চা পান করতে পারবেন। দ্বিতীয়টি একই সড়ক ধরে গেলে রামনগরে অবস্থিত। ২০-২৫ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে যেতে পারেন। এখানে চা বাগানের চমৎকার পরিবেশে বসে চা পান করতে পারবেন