যে কারণে ফিরাউনের স্ত্রী হয়েও স্থান পেলেন জান্নাতে

Ayas-ali-Advertise
যে কারণে ফিরাউনের স্ত্রী হয়েও স্থান পেলেন জান্নাতে
যে কারণে ফিরাউনের স্ত্রী হয়েও স্থান পেলেন জান্নাতে। প্রতীকি ছবি।
যে কারণে ফিরাউনের স্ত্রী হয়েও স্থান পেলেন জান্নাতে
যে কারণে ফিরাউনের স্ত্রী হয়েও স্থান পেলেন জান্নাতে। প্রতীকি ছবি।
Facebook
Twitter
WhatsApp

ইতিহাসের অন্যতম জুলুমবাজ শাসক ফিরাউন। তার নিষ্ঠুরতা, অহংকার ও অবিশ্বাসের কাহিনি কোরআন ও হাদিসে বারবার উঠে এসেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই ভয়ংকর ব্যক্তির স্ত্রী আসিয়া (আ.) ছিলেন ঈমানদার নারীদের অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি ফিরাউনের প্রাসাদে থেকেও কখনো তার পথ অনুসরণ করেননি। বরং তিনি সত্যের পথে অবিচল থেকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। কিন্তু কী সেই কারণ। যা তাকে ফিরাউনের স্ত্রী হয়েও জান্নাতের রানী বানাল? আসুন তার ঈমানদীপ্ত জীবনের গল্প জানি।

মিশরের রানী আসিয়া (আ.) ছিলেন ধনী, ক্ষমতাশালী এবং অত্যন্ত সম্মানিত এক নারী। কিন্তু তার জীবনে একটি অপূর্ণতা ছিল—তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। ফিরাউন যখন স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে নবজাতক ইসরায়েলি শিশুকে হত্যা করার আদেশ দেয়। তখন নবী মুসা (আ.)-এর মা তাকে এক ঝুড়িতে করে নীলনদে ভাসিয়ে দেন। সেই ঝুড়িই গিয়ে পৌঁছায় ফিরাউনের প্রাসাদে। ফিরাউন শিশুটিকে হত্যা করতে চাইলে রানী আসিয়া (আ.) বাধা দেন। তিনি বলেন— “এই শিশু আমার ও আপনার চোখের শীতলতা হতে পারে। তাকে হত্যা করবেন না। হতে পারে সে আমাদের কাজে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করব।” (সূরা কাসাস: ৯) এরপর মুসা (আ.) রানীর আশ্রয়ে বড় হতে থাকেন।

বছর পেরিয়ে যায় মুসা (আ.) নবুয়ত পান এবং এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দেন। কিন্তু ফিরাউন একে বিদ্রোহ হিসেবে দেখে এবং তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। এই সময়েই আসিয়া (আ.)-এর অন্তর সত্যের আলোয় আলোকিত হয়। তিনি গোপনে ঈমান গ্রহণ করেন এবং মুসা (আ.)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন। কিন্তু ফিরাউনের প্রাসাদে সত্য গোপন থাকে না। একদিন তার ঈমানের কথা জানাজানি হলে ফিরাউন চরম রেগে যান। তিনি তার স্ত্রীকে ধরে এনে ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করেন। তাকে মরুভূমির উত্তপ্ত রোদে শেকলবন্দি করে ফেলে রাখা হয়। খাবার ও পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে পাথর দিয়ে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই কঠিন মুহূর্তে আসিয়া (আ.) আল্লাহর দিকে তাকিয়ে এক অবিশ্বাস্য দোয়া করেন— “হে আমার রব! আমার জন্য আপনার নিকট জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফিরাউন ও তার কুকর্ম থেকে মুক্তি দিন এবং আমাকে জালিম সম্প্রদায়ের হাত থেকে রক্ষা করুন।” (সূরা তাহরিম: ১১) আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন এবং আকাশ উন্মুক্ত করে তাকে জান্নাতে তার স্থান দেখিয়ে দেন। এই দৃশ্য দেখে তিনি হাসতে থাকেন। যা দেখে ফিরাউন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যা করতে বলে। কিন্তু আল্লাহ তার আত্মাকে তুলে নেন। পাথর তার শরীরে পড়ার আগেই তিনি দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন।

আসিয়া (আ.)-এর জীবন আমাদের জন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন একাধারে রানী। ক্ষমতাশালী নারীদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সত্যের জন্য সব ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন— দুনিয়ার সম্পদ ও ক্ষমতা নয়। বরং ঈমানই মানুষের প্রকৃত পরিচয়। কঠিন পরীক্ষার মুখেও যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখে। তাদের জন্য জান্নাত নিশ্চিত। একজন নারী শুধু রাজপ্রাসাদে থেকে নয়। বরং ঈমানের দৃঢ়তার মাধ্যমেই সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন হতে পারেন।

ফিরাউনের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন ঈমানদারদের পথপ্রদর্শক। তার ধৈর্য আত্মত্যাগ ও বিশ্বাস তাকে জান্নাতের রানী বানিয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত তিনি নারী ও পুরুষ—সবার জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪