আব্বাস হোসেন ইমরান : হতদরিদ্র পরিবার। মা-বাবা গত হয়েছেন বহু বছর আগে। বড় বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে সেই কবে! ফলে, পরিবারের সদস্য সংখ্যা এখন মাত্র চার। এক ভাই তিন বোনের ছোট্ট পরিবার। অথচ, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তারা চার ভাই-বোনই জন্মগত প্রতিবন্ধী। আর জন্মগত প্রতিবন্ধী এবং দরিদ্র হওয়ার কারণে মানবেতর দিনযাপন করে আসছেন তারা। জীর্ণ কুটিরে করছেন অনিরাপদ বাস। নিজেদের একটি টিউবওয়েল না থাকায় বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত রয়েছেন সুপেয় পানি পান থেকে।
আলোচিত এই প্রতিবন্ধী পরিবারের বাস সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের পাঠানেরগাঁও (তালুজগত) গ্রামে। ওই গ্রামেরই মৃত মন্টাই মিয়ার সন্তান প্রতিবন্ধী চার ভাই-বোন। তাদের মধ্যে রুবিনা বেগম (৩০) শ্রবণ প্রতিবন্ধী, মিনারা বেগম (২৬) ও রুকশানা বেগম (২০) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং তাদের একমাত্র ভাই লিলু মিয়া (২৪) বহুবিধ প্রতিবন্ধী।
জানা গেছে, রুকশানা বেগমের জন্মের দুই বছর পর মারা যান হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র অভিভাবক মন্টাই মিয়া। এরপর তার স্ত্রী ফুলতেরা বেগম অভাব-অনটনের সংসারে হাল ধরতে অন্যের বাড়িতে শুরু করেন দিনমজুরের কাজ। একটা সময়ে বড় মেয়েকে বিয়েও দিয়ে দেন। বড় মেয়ের বিয়ের কয়েকমাস পরেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফুলতেরা বেগমও। মন্টাই-ফুলতেরা দম্পতির মৃত্যুর পর প্রতিবেশীরা মিলে তাদের ২য় মেয়ে রুবিনা বেগমকে বিয়ে দেন। কিন্তু শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় এবং কথার মধ্যে জড়তা থাকায় তার সংসার বেশিদিন টেকেনি। ফিরে আসতে হয় পিত্রালয়ে। সংসার দেখাশোনার ভার পড়ে তার কাধে।
সরেজমিন প্রতিবন্ধী রুবিনা-লিলু মিয়াদের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, পুরনো মরিচাপড়া টিনের বেষ্টনির জীর্ণ ঘরের বারান্দায় বসে চা-বিস্কিট খাচ্ছেন চার প্রতিবন্ধী ভাই-বোন। দুপুরের খাবার না খেয়ে চা-বিস্কিট খাওয়ার কারণ জানতে চাইলে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন তারা। জানান, ‘ঘরে চাল-ডাল কিছুই না থাকায় আজ দুপুরে ভাতের বদলে আমরা চা-বিস্কিট খাচ্ছি।’
কথায় হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিনারা বেগমের সাথে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমাদের মা-বাবা নেই। বিয়ের পর থেকে বড় বোনও আর এখানে আসেন না। মূল ভিটায় থাকা মাটির ঘরটি অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। এখন আমরা তিনবোন আমাদের একমাত্র ভাইকে নিয়ে একটা ভাঙ্গাচোরা ঘরে দিনরাত কাটাচ্ছি। রাত হলেই ভয় হয়। বৃষ্টির দিনে তো অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে। আমরা তিন ভাই-বোন সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। কিন্তু ভাতার টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়।’
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রুকশানা বেগম বলেন, ‘আপাততঃ আমাদের একটি পাকাঘর ও একটি টিউবওয়েল জরুরী। আমার বোন মিনারা বেগমকে অনেক কষ্টে পাশের বাড়ির টিউবওয়েল থেকে প্রতিদিন পানি নিয়ে আসতে হয়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়ার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই পরিবারের যেই সদস্য এখনো ভাতা পান নাই, তাকেও ভাতার আওতায় নিয়ে আসা যায় কি না-আমি দেখছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমি সমাজসেবা অফিসে কথা বলে ওই পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করে দেব’।