AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিজ্ঞানময় কোরআন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুলাই - ২৩ - ২০১৪ | ৭: ১৪ অপরাহ্ণ

Photo

মোঃ মোছায়েল আহমদ : আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে আরবের নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর পবিত্র কোরআন নাযিল হয়। এই মহাগ্রন্থ আল কোরআন পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার এক অনুপম সৃষ্টি। এই ঐশী গ্রন্থের শুরুতেই পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা গ্রন্থটি সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন, সেই বক্তব্যই গ্রন্থটিকে তাঁর আপন মহিমায় নিজেকে বিশ্ববাসীর কাছে সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, কোন লেখক তাঁর বইয়ের অবতরণিকায় বলে থাকেন যে, তার সর্বোচ্চ সতর্ক দৃষ্টি থাকা সত্তেও বইটিতে ক্রটি বিচ্যুতি থাকতে পারে এবং তিনি তার এই অনিচ্ছাকৃত ক্রটির জন্য পাঠকের নিকট সবিনয়ে ক্ষমাও চেয়ে থাকেন। কিন্তু মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের প্রণেতা অত্যন্ত গর্বভরে তার গ্রন্থের অবতরণিকায় বলেন যে, ‘‘যালিকাল কিতাবু লা রাইবাফি।’’ অর্থাৎ আমার এই বইটিতে বিন্দু মাত্র ক্রটি বা ভুলের নিদর্শন নেই। এই এতবড় চ্যালেঞ্জ আমার মনে হয় বিশ্বের কোন লেখক , কোন বিজ্ঞানী কোন দার্শনিক আজ পর্যন্তকরতে সাহস করেন নি । আর ভবিষ্যতে  করবেন বলে ও মনে হয় না।
পবিত্র কোরআনে কোন ভুল নেই , কোন সন্দেহ নেই এই কথা আমরা অনেকেই কোরআনকে রিচার্স বা গবেষণা না করেই মুখে স্বীকার ও অন্তরে বিশ্বাস করে নিয়েছি। যার ফলে কোরআন যে, যুগোপযোগী, বিজ্ঞানময় ও শাশ্বত এই বিশ্বাসটুকু আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়নি। ফলে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের ভিত্তি যারপর  দূর্বল অবস্থায় আছে।
সুপ্রিয় পাঠক , আসুন তাহলে দেখি মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বাণী সমূহ আমাদের বর্তমান বিজ্ঞানময় বাস্তব জগতের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বিজ্ঞান পশ্চাৎপদ অতীতের সাথেই বা কতটুকু সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল, এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমে আমি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনার বর্ণনা করছি, যা কিনা পবিত্র কোরআনের সুরা আল ইমরানে বর্ণিত হযরত ঈসা (আঃ) এর অলৌকিক ঘটনার সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমি ২০০৩ ইং সনে ইংরেজী প্রশিক্ষনের জন্য দীর্ঘ এক মাস ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। থাকতাম ধানমন্ডির নায়েম হোস্টেলে। প্রতিদিন বিকেল বেলা দল বেঁধে নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় বেড়াতে যেতাম। একদিন নিউমার্কেট এলাকায় খুব ঘুরছি। হঠাৎ দেখি, এক অন্ধ লোক এক বিরাট লাইব্রেরী ব্যবসা আঞ্জাম দিচ্ছেন। এই ঘটনা দেখে আমি রীতিমত অবাক। জীবনে এমন আচানক ঘটনা তো আর কোনদিন দেখিনি। লাইব্রেরীর মত একটি ব্যবসা যেখানে প্রতি নিয়ত পড়ালেখার দরকার সেখানে এই অন্ধলোকটি কিভাবে কি করছেন , আমি তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি আস্তে আস্তে লোকটির খুব কাছে গিয়ে প্রথমে তার দুটি চোখ খুব ভাল করে দেখলাম। লোকটির চোখ সম্পর্কে কি বলব। চোখের কোন অস্তিত্বই নেই। দুটি চোখের স্থান চামড়া দিয়ে খুব ভাল করে লেপানো। মনে হচ্ছিল যে, লোকটি জন্মান্ধ। যা হোক, আমি তখন তাকে কাসাসুল আম্বিয়া নামক বইটি দিতে বলি। তিনি তৎক্ষণাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন খন্ড? আমি বললাম প্রথম খন্ড। অতঃপর যা দেখলাম, তাতে আমার মনে হচ্ছিল যে, কোন এক অদৃশ্য পরিচালক যেন ঐ অন্ধলোকটির পাশে দাঁড়িয়ে  তাকে তার ব্যবসায়ী কাজে সর্বোতভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। আমার তখন মনে পড়ল, পবিত্র কোরানের সেই কালজয়ী বানী “স্মরণ কর সে সময়ের কথা, যখন ফেরেস্তা বলল, হে মারিয়াম, আল্লাহ আপনাকে ঈসা নামক এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যিনি দোলনা থাকা অবস্থায় ও অপরিনত বয়সে কথা বলবেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সম্মানিত ব্যক্তিদের  অন্তর্ভূক্ত হবেন। মারিয়াম বললেন, আমার কিভাবে সন্তান হবে। যেহেতু কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। জবাবে ফেরেস্তা বললেন, আল্লাহ যখন কোন জিনিস সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন, তখন এভাবেই করেন। পাঠক, পবিত্র কোরআনের এই বর্নণা থেকে আমরা যা বুঝলাম, তা হচ্ছে আল্লাহ ইচ্ছা করলে কোন মাধ্যম ছাড়াই কোন কাজ অনায়াসে করে নিতে পারেন। এটা মহাপরাক্রমশালী সত্তার জন্য আদৌ কোন জটিল কাজ নয়। পিতা ছাড়া সন্তান জন্ম দেওয়া তাঁর জন্য যেমন বিষয় নয়, তদ্রুপ চক্ষু ছাড়া দৃষ্টি শক্তি দান করাও তার জন্য কোন বিষয় নয়। এরকম একটি নয়, এ পৃথিবীতে হাজার হাজার ঘটনা আছে, যে সকল ঘটনা কোরআনী বক্তব্যকে অত্যন্ত জোরালোভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে। বিজ্ঞান মানব সৃষ্টির ব্যাপারে এগুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি প্রমাণ করার আগেই পবিত্র কোরআন আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে যে, “আমি মানুষকে পুঁতি দূর্গন্ধময় এক ফোঁটা না পাক পানি থেকে সৃষ্টি করেছি। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানী দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেও মানব সৃষ্টির এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটির বিকল্প কিছু আবিস্কার করে কোন মানব সন্তানের জন্ম দিতে পারেননি আর ভবিষ্যতে পারবেন না বলেও পবিত্র কোরআন মানব জাতীর সামনে এক শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআন আসলেই মহান সত্তার পক্ষ থেকে প্রেরিত কোন ঐশী জীবন বিধান কিনা, এই নিয়ে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে আসছে নানা জল্পনা কল্পনা। কিন্তু বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কার পবিত্র কোরআনের প্রতি সন্দেহের সকল ধুম্রজাল ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনের সুরা আর -রাহমানের নি¤েœাক্ত কয়েকটি আয়াতের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যাতে কোরআনের প্রতিটি কথা যে অত্যন্ত সঠিক এবং বিজ্ঞানময় এ ব্যাপারে পাঠক আরও নিশ্চিত হবেন বলে আমি জোর আশাবাদী। আল্লাহ বলছেন “মারাজাল বাহরাইনী ইয়াল তাকিয়ান, বাইনাহুমা বারযাখুল্লা ইয়াবগিয়ান” অর্থাৎ আমি দুইটি সাগরকে পাশাপাশি প্রবাহিত করিয়াছি এবং তাদের মাঝে একটি পর্দা বা অন্তরায় সৃষ্টি করিয়াছি। এই আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষন হচ্ছে: পরম করুনাময় আল্লাহ তাআলা এতই ক্ষমতাবান যে, তিনি একটি মিঠা পানির দরিয়া ও একটি লোনা পানির দরিয়াকে পাশাপাশি প্রবাহিত করেছেন এবং এই দুটি সমুদ্রের মাঝখানে একটি অদৃশ্য কুদরতি হিজাব বা পর্দার সৃষ্টি করেছেন, যাতে একটি আরেকটিকে অতিক্রম না করে। আজ আটলান্টিক মহাসাগরের সাড়ে চার হাজার মাইল দৈর্ঘ্য ও আড়াই হাজার মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট প্রবাহমান মিঠা পানির দরিয়া পবিত্র কোরআনের এই বানীকে সত্য বলে প্রমাণ করেছে। উত্তর আমেরিকার গভীর অরুণ্যে দুগ্ধদানকারী বৃক্ষ, যার দুধ কিনা একটি গাভীর দুধের মতই সুস্বাদু ও ভিটামিন যুক্ত এবং একই জঙ্গলে অবিরাম বৃষ্টি দানকারী বৃক্ষসমূহ কি প্রমাণ করে নি যে, যেখান থেকে প্রকৃতি দুধ ও বৃষ্টি পাওয়ার কথা, আল্লাহ ইচ্ছা করলেই তাহা অন্যভাবেও তার প্রকৃতিকে দান করতে পারেন। “আমি যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে পারি, অথবা আমি যাহা জানি তোমরা তাহা জাননা- বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের অতি সাম্প্রতিক বিস্ময়কর ঘটনা সমূহ কি মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের উল্লেখিত বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি ? বৃটিশ বিজ্ঞানীদের তথাকথিত সেই ক্ষণভঙ্গুর চ্যালেঞ্জের ব্যর্থতা প্রমাণ করে জলদানব টাইটানিকের সলিল সমাধির মাধ্যমে আল্লাহ কি প্রমান করতে সক্ষম হননি যে, তিনি যাহা ইচ্ছা তাহাই করতে পারেন। জবাবে আমাদেরকে নিসংশ চিত্তে বলতে হবে অবশ্যই অবশ্যই। তবে এই আন্তরিক স্বীকৃতি কেবল তাঁরাই দিয়ে থাকেন, যাঁরা আকাশ ও জমিন সৃষ্টি নৈপূন্য এবং দিন রাত্রির গমনাগমন নিয়ে ভাবেন আর বিশাল সমূদ্র, নক্ষত্র খচিত নীল আকাশ ও দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠের দিকে চেয়ে বলেন হে প্রভু, তুমি তো এগুলো অবশ্যই অনর্থক সৃষ্টি করনি।

আরো সংবাদ