Search
Close this search box.

শবে বারাআতের ফযিলত : করনীয়-বর্জনীয় হাসান বিন ফাহিম

শবে বারাআতের ফযিলত
Facebook
Twitter
WhatsApp

আল্লাহ রাহিম, রাহমান, আরহামুর রাহিমীন। তিনি তার অশেষ দয়ায় উম্মতে মুহাম্মাদীকে শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন। আগেকার নবীদের হায়াত ছিলো দীর্ঘ। তাদের উম্মতদের হায়াত ছিলো শত থেকে হাজার বছর। সঙ্গত কারণে আমলের দিক থেকে পূর্ববর্তি উম্মতদের অতিক্রম করা এ উম্মতের জন্য দুস্কর। কিন্তু মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীর ছোট্র হায়াতে হাজার হাজার বছরের ইবাদাত করা সুযোগ দান করেছেন। এ ছাড়াও গুনাহের সাগরে ভাসমান বান্দাদের জন্য মাগফিরাত ও তাওবা ক্ববুলের বিশেষ সুযোগ করে দিয়েছেন। মুহাম্মাদ সা.এর উম্মতদের তিনি দান করেছেন ‘লাইলাতুল ক্বদর’। যে রাতটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। দিয়েছেন সাপ্তাহিক জুমুআর রাত, দুই ঈদের রাত, নিসফে শা’বান তথা শা’বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। এই রাতগুলোতে ইবাদাত ও দোয়া ক্ববুলের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।

লাইলাতুননিসফি মিন শা’বানকে ফার্সি ভাষায় শবে বারাআত বা মুক্তির রজনী বলা হয়। রাসুল সা.এর হাদীসে এই রাতের ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।আমাদের উচিত-হাদীসে বর্ণিত শব ই বারাআতের ফযিলত জেনে রাসুল সা. এর সুন্নত মুতাবিক আমল করা। মনে রাখা জরুরী যে রাসুল সা. এর অনুকরণ ছাড়া কোন আমলই আমল নয়। যেমন-নামাজ ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। কিন্তু কেউ যদি সূর্যোদয়, দ্বিপ্রহর, সূর্যাস্তের সময় নামাজ পড়ে বা দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাজ তিন রাকাত পড়ে তাহলে এই নামাজের সাওয়ার তো দূরের কথা কঠিন গুনাহ হবে। এমনিভাবে রোজা শ্রেষ্টতম ইবাদত। কিন্ত কেউ যদি দুই ঈদ,আইয়ামের তাশরিকে রোজা রাখে তাহলে কঠিন গুনাহগার হবে। কেননা তখন এই আমলগুলো রাসুল সা.এর সুন্নত অনুযায়ী হয় নি। তাই আসুন আমরা শবে বারাআত সম্পর্কে জানি এবং বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি বাদ দিয়ে যা আমল আছে তা করি, যা বর্জনের আছে তা ছাড়ি।

শবে বারাআতের ফযিলত

১. হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান – ৫৬৬৫, শুআবুল ঈমান – ৩৮৮৩, বায়হাকি) সম অর্থের হাদীস মুসনাদে বাজ্জারে (-৮০) হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. থেকে, হযরত আউফ ইবনু মালিক রা. থেকে মুসনাদু বাজ্জারে (২৭৫৪), ইবনু মাজাহ শরীফে (১৩৭০) হযরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে, মুসনাদু বাজ্জারে (৯২৬৮) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা. থেকে মুসনাদু আহমদে (৬৬৪২) সম অর্থের হাদীসে ‘বিদ্বেষপোষণকারি’র স্থলে ‘হত্যাকারী’ শব্দ এসেছে।

২. আবু সালাবা আল খুশানি রা. থেকে বর্ণিত; রাসুল সা. বলেন-শাবানের ১৪ তারিখ রাতে আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। আল্লাহ মুমিনদের ক্ষমা করে দেন। কাফিরদের আরও ছাড় দেন; আর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীকে সেগুলো দূর না করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না। (আস সুনানুস সুগরা-১৪২৬, বায়হাকি; আল মু’জামুল কাবির-৫৯০)

৩. হযরত আয়শা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণিত-রাসুল সা. একবার রাত জেগে নামাজ পড়েন। তিনি সা. সিজদা এত দীর্ঘ করেন যে আমি ধারণা করি তিনি মারা গেছেন। এ অবস্থায় আমি দাঁড়িয়ে তাঁর আঙুল নাড়া দিই। তিনি নড়লেন। আমি ফিরে আসি। রাসুল সিজদা থেকে মাথা তুলে সালাত শেষ করে বলেন ‘হে আয়েশা, তুমি কি ধারণা করেছ, নবি তোমার থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।’ আমি বলি, ‘না, আপনার দীর্ঘসময়ের সিজদার কারণে আপনি মারা গেছেন বলে ধারণা করেছি।’

রাসুল বললেন, ‘তুমি কি জানো আজ কোন রাত?’ আমি বলি, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন।’ তিনি বললেন, ‘আজ শাবানের ১৪ তারিখ রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা সমস্ত সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন। অনুগ্রহপ্রার্থীদের ওপর অনুগ্রহ করেন। তবে হিংসুকদের তিনি ক্ষমা করেন না। (শুআবুল ঈমান-৩৮৩৫, বায়হাকি

৪. হযরত আয়শা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণিত-একরাতে রাসুল-কে আমি হারিয়ে ফেলি। খুঁজে খুঁজে জান্নাতুল বাকিতে তাঁকে পাই। তিনি বললেন, ‘তুমি কি ভয় করেছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার ওপর অত্যাচার করেছেন?’ আমি বলি, ‘আল্লাহর রাসুল, আমি ধারণা করেছি, আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে এসেছেন।’ রাসুল বললেন, ‘আল্লাহ শাবানের ১৪ তারিখ রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বনু কালবের বকরির পশমের সংখ্যার চেয়ে বেশি মানুষকে ক্ষমা করেন। (সুনানুত তিরমিযি-৭৩৯,ইবনু মাজাহ-১৩৮৯)

এ ছাড়াও অনেক হাদীস ও আসার দ্বারা শবে বারাআতের ফযিলত প্রমানিত। অনেকে সুরা দুখানে ৩-৪ নং আয়াত (আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি বরকতময় রাতে। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়) কে শবে বারাআতের ফযিলত হিসেবে বর্ণণা করেন। কিন্তু মুহাক্কিক্বিন ও ফুক্বাহাদের মতো এই আয়াত এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই আয়াতে শবে ক্বদর আলোচিত হয়েছে।

করণীয়

সুতরাং শবে বারাআতের ফযিলত সম্পর্কে আমরা জানলাম যে এই রাতের শুরু থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহর রহমাতের দরজা উন্মুক্ত থাকে এবং আল্লাহ মুনাজাতকারিদের মুনাজাত ক্ববুল করেন। যেমনটি প্রতি রাতের শেষভাগে করে থাকেন। আমাদের উচিত এই রাতটিকে ক্বদর করা এবং বেশি বেশি আমলে মশগুল থাকা। নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দুরুদ-ইস্তেগফার পাঠ ও মুনাজাত করা। এ রাতের সব আমলই ব্যক্তিগত। সম্মিলিত কোন আমল রাসুল সা.এর সুন্নত থেকে প্রমানিত নয়।

বর্জনীয়

শবে বারাআতকে কেন্দ্র করে আতশবাজি,পটকা ফোটানো, আগরবাতি, মোমবাতি, মরিচবাতি প্রজ্জলন, দোকান, ঘর-বাড়ি বা সড়কে আলোকসজ্জা ইত্যাদির মাধ্যমে পার্থিব উৎসবে রুপান্তরিত করণ করা যাবে না। শব ই বারাআতের নির্ধারিত কোন নামাজ নেই। অন্য দিনের মতোই নফল নামাজ পড়তে হবে। শব ই বারাআতের সকল আমলই নফল। নফল আমল গোপনে করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সে জন্য একান্ত অপারগতা ছাড়া মসজিদে না গিয়ে নফল ইবাদত ঘরে করাই উত্তমমসজিদে বা বাড়িতে সম্মিলিত কোন ইবাদত হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়। তাই শবে বারাআত উপলক্ষ্যে মসজিদে মাহফিল আয়োজন,দলবদ্ধভাবে কবর যিয়ারত করা যাবে না। আল্লাহ আমাদেরকে শবে বারাআতের সমস্ত ফযিলত ও বরকত হাসিল করার তাওফিক দান করুন। সকল বর্জনীয় কাজ বর্জন করার তাওফিক দান করুন।

লেখক: শিক্ষক-জামিয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথ, সিলেট

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪

আরও খবর

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত