সিলেটের নগরীর সােবহানীঘাটস্থ বনফুল এন্ড কোম্পানির দোকানের ২য় তলায় উঠার সিঁড়ির সামনে (নিচ তলায়) নারী ছদ্মবেশী তুষার আহমদ (২০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার ৯টার দিকে খবর পেয়ে সােবহানীঘাট মরদেহ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তাকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মৃত তুষার আহমদ (২০) ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার শ্যামগঞ্জ বাজার গ্রামরে আবুল হাসেমের ছেলে। তিনি সিলেট নগরীর এয়ারপোর্ট থানাধীন খাসদবির এলাকার তরঙ্গ-৩৮-এ থাকতেন।
তুষারের বড় ভাই হিমেল আহমদ রাফি জানান, তুষার আহমদ প্রাইমারি স্কুলে পড়া অবস্থায়ই নিজেকে নারী সাজে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। চলাফেরা করতেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতো। প্রাইমারি শেষে তার পড়ালেখা এগুয়নি। পরিবার থেকে নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও মাধ্যমিকে ভর্তি করা যায়নি তুষারকে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে তার চলাফেরা। একপর্যায়ে প্রায় প্রতি রাতেই হিজড়াদের মতো করে নিজেকে সাজিয়ে তার ‘হিজড়া বন্ধুদের’ সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে তুষার।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এভাবে তার এক ‘হিজড়া বন্ধু’ তাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে তুষারের লাশ মিলে নগরীর সোবহানীঘাটে বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির দোকানের পাশে।
ময়না তদন্ত শেষে নগরীর মানিকপির টিলায় তুষারের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ হতে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তুষারের বড় ভাই হিমেল আহমদ রাফি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) সূত্র জানায়, রবিবার ৯টার দিকে সােবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির খবরের ভিত্তিতে সােবহানীঘাটস্থ বনফুল এন্ড কোম্পানির দোকানের ২য় তলায় উঠার সিঁড়ির সামনে (নিচ তলায়) তুষারের মৃতদেহ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানাপুলিশ। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর লাশ ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এর আগে তুষারের মা নাছিমা বেগম তার লাশ শনাক্ত করেন।
মৃতের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়- তুষার নিজেকে ৩য় লিঙ্গের মানুষ পরিচয় দিতেন এবং সেই বেশে থাকতে পছন্দ করতেন।
দাফনের আগে কেঁদে কেঁদে তুষারের ভাই হিমেল বলেন- আমার ভাই হিজড়া নয়। ছোটবেলায় একসঙ্গে আমাদের খতনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খাসদবির প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় সে অদ্ভূত আচরণ করতে থাকে এবং একসময় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করতে থাকে। আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিকে খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য পুলিশের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
তিনি জানান- প্রায় প্রতিদিন রাতই তুষার তার হিজড়া বন্ধুদের সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ফিরে পরদিন সকালে। এ ব্যাপারে তাকে বার বার নিষেধ করেও কথা মানানো যায়নি। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকেও এভাবে তার এক হিজড়া বন্ধু তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তবে ওই হিজড়াকে আমি কখনো তার সঙ্গে দেখিনি। রাতে ওই হিজড়ার সঙ্গে বেরিয়ে গিয়ে আর রাতে ঘরে ফেরেনি তুষার। সকালেই জানতে পারি তার লাশ সোবহানীঘাটের ওই জায়গা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।