AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে পাল্টা অভিযোগ

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জানুয়ারি - ১৩ - ২০২০ | ৭: ৫৬ অপরাহ্ণ

বিশ্বনাথনিউজ২৪ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আর প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের দ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করেছে। রয়েছে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। একদিকে রয়েছেন অধ্যক্ষ এবং অপর দিকে প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের সঙ্গে একজোট রয়েছেন মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপালসহ সকল শিক্ষক ও গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। তাদের এই দ্বন্ধে বলি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা।

এদিকে, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইনের বিরুদ্ধে ভূয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ এবং একই সাথে অধ্যক্ষ ও কাজী পদে দায়িত্ব পালন করে বিধি বহির্ভূতভাবে বেতন ভাতা ভোগ সহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্ণীতির অভিযোগ করেন। গত বছর ১২মার্চ সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর ওই অভিযোগ করেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা ওলিউর রহমানের চাচাতো ভাই মাদ্রাসার আজীবন দাতা সদস্য আব্দুস সবুর।

অধ্যক্ষ তার বিরুদ্ধে আনিত এই অভিযোগ থেকে বাঁচতে আজীবন দাতা সদস্য আব্দুস সবুর, মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল ও সভাপতি’সহ প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ করেন। ওই লিখিত অভিযোগে এলাকার কয়েকজন লোকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ফুসে উঠছেন এলাকাবাসী। এনিয়ে এলাকায় বিরাজ করছে উত্তেজনা।

জানাযায়, ১৯৭০ সালে তেলিকোনা গ্রামের ভেতরে ‘এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেন মরহুম মাওলানা ওলিউর রহমান। প্রতিষ্ঠাতার তত্বাবধানে ও এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ইতিমধ্যে পড়ালেখার মান ও পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জনের মাধ্যমে মাদ্রাসাটি উপজেলার শ্রেষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠে। দীর্ঘ ২৩বছর ধরে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন একই গ্রামের মাওলানা আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইন। মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তির পর থেকে সরকারি অনুদানও পেয়ে আসছে নিয়মিত।

প্রতিষ্ঠার মৃত্যুর পর থেকে মাদ্রাসা পরিচালনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম করায় অধ্যক্ষের সাথে বিরোধ দেখা দেয় গভর্নিং বডি’র কমিটি সভাপতি রাবেয়া আক্তার (প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী) সহ সদস্যদের। সম্প্রতি সরকারী অর্থায়নে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদ্রাসার একটি নতুন ভবনের অনুমোদন হলে আভ্যন্তরিন দ্বন্ধটা প্রকাশে চলে আসে। তেলিকোনা গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে মাদ্রাসার বর্তমান একাডেমীক ভবন থাকলেও অধ্যক্ষ তার নিজের পচন্দমতো স্থানে (গ্রামের উত্তর পার্শ্বে) নতুন ভবন নির্মাণের চেষ্টা শুরু করেন। এতে আপত্তি জানান প্রতিষ্ঠাতার পরিবার, গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দ ও গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। একপর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের হস্তক্ষেপে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করতে সৎপুর কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুর রহমানকে প্রধান করেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত ওই কমিটি অধ্যক্ষকে ভবন নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান জায়গার ব্যবস্থা করতে সময় নির্ধাণ করে দেন। কিন্ত তিনি জায়গার ব্যবস্থা করতে না পারায় মাদ্রাসার বর্তমান ভবনের প্রায় তিনশত গজ উত্তরে নতুন ভবনের জন্য জায়গা দান করতে সম্মতি জানান প্রতিষ্ঠাতার পরিবার। এতে অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ’সহ গঠিত কমিটির সকলের সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশনের মাধ্যমে ওই জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা ওলিউর রহমানের উত্তরাধিকারীরা মাদ্রাসার নামে ৩৪শতক ভূমি রেজিষ্ট্রারী করে দেন। দানকৃত জায়গার বর্তমান আনুমানিক মূল্য হবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এরপর গতবছরের ১০ ডিসেম্বর বর্ণাঢ্য আয়োজনে সকলের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দানকৃত ওই জায়গা নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এমপি মোকাব্বির খান।

এদিকে অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইনের বিরুদ্ধে আনিত আজীবন দাতা সদস্য আব্দুস সবুরের অভিযোগ গতবছরের ২৪ ডিসেম্বর সরেজমিন তদন্ত করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সমির কান্তি দেব। তদন্তে অভিযোগের অনেকটার সত্যতা তদন্ত কর্মকর্তা পেয়েছেন বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়। তবে এব্যাপারে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা।

অন্যদিকে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সরেজমিন তদন্তের পরই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি (প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী) রাবেয়া আক্তার, ভাইস প্রিন্সিপাল (প্রতিষ্ঠাতার ভাই) মাওলানা মুখলিছুর রহমান, দাতা সদস্য (প্রতিষ্ঠাতার চাচাতো ভাই) সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুস সবুর এবং প্রতিষ্ঠাতার তিন পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী মাওলানা নুরুর রহমান, মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান ও আমিনুর রহমান (প্রতিবন্ধী) এর বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রী সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গত ৭ জানুয়ারি অভিযোগ প্রদান করা হয়। লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন অধ্যক্ষের ভগ্নিপতি মোহাম্মদপুর গ্রামের সুলতান আলী, চাচা তোলিকুনা গ্রামের আব্দুল মুক্তাদির, চাচাতো ভাই আনিছ মিয়া, ফারুক মিয়া, তেঘরী গ্রামের মো. নুরুল হক, নূর মিয়া, মোহাম্মদপুর গ্রামের সিরাজ উদ্দিন, ভাটপাড়া গ্রামের বাবুল আহমদ, বিলপাড় গ্রামের ফয়জুল ইসলাম ও আমেরগাঁও গ্রামের সোনাফর আলী।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা পারিবারিকভাবে জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রতি রমজান মাসে তারা ‘ইত্তেহাদুল র্কুরা বাংলাদেশ’ নামের জামায়াত-শিবিরের সংগঠন প্রশিক্ষণের জন্য মাদ্রাসাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। খোলা জায়গায় মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে এই প্রশিক্ষণ ব্যাহত হবে। সেজন্য নুরুর রহমান গ্রামের কথিপয় লোকদের অর্থ দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে জোরপূর্বকভাবে তাদের পছন্দমতো জায়গায় অতি গোপনে ভবন নির্মাণের পায়তারা করছে জামায়াত-শিবির চক্র।

তবে স্বাক্ষকারী নুর মিয়া, বাবুল আহমদ, সোনাফর আলী ও সিরাজ উদ্দিনসহ অধিকাংশই অভিযোগ প্রদানের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন দাবি করে জানান, অধ্যক্ষ তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাদ্রাসার উন্নয়নের কথা বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন।

মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক এ টি এম নুর উদ্দিন সহ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সকলের উপস্থিতিতে ও মতামতের ভিত্তিত্বে রেজুলেশনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন এমপি। মাদ্রাসায় শুধু জামায়াত-শিবির কেন, কোন রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম পরিচানা করা হয়নি। আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল সহ ৬জনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সত্য দাবি করে অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবিরের আস্তানা রয়েছে। এমনকি মাদ্রাসায় বিভিন্ন দিবস পালন করতে চাইলে অভিযুক্তরা এতে বাঁধা প্রদান করেন।

আনিত অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা মুখলিছুর রহমান বলেন, অধ্যক্ষের অনিয়িম-দুর্ণীতি ঢাকতে এলাকার লোকজনদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্য ও ভিত্তিহীন।

আরো সংবাদ