আবুল কালাম আজাদ, ওসমানীনগর (সিলেট) থেকে : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেটের প্রবেশ মূখ বালাগঞ্জের শেরপুর থেকে সিলেট হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত অসংখ্য স্থানে ফাটল, ভাঙ্গন আর খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে গাণিতিকহারে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে গাড়ি। যাত্রী সাধারণকে ২০মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে হচ্ছে এক ঘন্টায়। সাথে রয়েছে জীবনের ঝুকি। মহাসড়কের এ দুরবস্থা সত্ত্বেও কার্যত সংস্কারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বালাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর থেকে সিলেট শহরের হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত প্রায় ৪১ কিলোমিটার সড়কে এ রকম চিত্রই দৃশ্যমান।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ক্ষত স্থানগুলো দেখলে মনে হবে ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ যেন মহাসড়ক নয় মহামরণফাঁদ। কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছেন। এতে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক লোকের প্রান হারাতে হচ্ছে। আহতের সংখ্যা অগণিত। প্রতিদিন লাশের মিছিল বাড়ছে। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করে সমাজ ও পরিবারের জন্য বুঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সারা দেশের সাথে পূর্বাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বালাগঞ্জ-সিলেট শহরের হুমায়ুন রশিদ চত্বর অংশের ৪১ কিলোমিটার এলাকা এখন যাত্রী ও পথচারীসহ আশপাশের বাসিন্দাদের জন্য মরণফাঁদ। দীর্ঘদিনের সংস্কারবিহীন এ মহাসড়কের বেশিরভাগ এলাকায় নিরাপদ যানবাহন পরিচালন যেমনি ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি অবৈধ যানবাহনের বেপড়োয়া গতিসহ রাস্তার পাশের নানা স্থাপনা ইতোমধ্যেই মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সাথে পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের অবাধ চাঁদাবাজি এ মহাসড়কে আইনের শাষণকে ক্রমশ বিপন্ন করে তুলছে। ফলে দুর্ঘটনা এ মহাসড়কে নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে।
এদিকে সম্প্রতি সংস্কারের নামে ওভার-লে (বিদ্যমান সড়কের ওপর পাথর বিস্তরন) উঠিয়ে মহাসড়ক উচু-নীচু করার ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। নি¤œমানের কাজ হওয়ায় অল্পদিনেই তা নষ্ট হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, বেশ কয়েকবার মহাসড়ক সংস্কারের নামে কয়েক কোটি টাকা বরাদ্ধ করা হলেও নাম মাত্র সংস্কার করে পুরো টাকাই হাতিয়ে নিচ্ছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক শ্রে্িরণর অসাধু কর্মকর্তা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শেরপুর টুলপ্লাজা, কাগজপুর, ফকিরাবাদ, ব্রাহ্মণগ্রাম,
গোয়ালাবাজার, ছিলমানপুর, গয়নাঘাট, ওসমানীনগর থানার সামন, তাজপুর, কদমতলা, ব্রাহ্মণশাসন, মোহাম্মদপুর, চকরবাজার, উত্তর দয়ামীর, কুরুয়া, নিজকুরুয়া, নাজিরবাজার, রশীদপুর, তেতলি ভাঙ্গন ও পাটল দেখা দিয়েছে। এলাকায় রাস্তা দেবে কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও আবার সরে যাওয়া কার্পেটিং স্তুপ আকার ধারণ করেছে। এসব স্তুপে দাক্কা লেগে গাড়ি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সড়কের নিচে পড়ে যায়।
বিশেষ করে, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, বাইপাস, চন্ডীপুল, বদিকোনা, তেলিবাজার, লালাবাজার, বাহাপুর, ফরিদপুর, রশীদপুর, নাজিরবাজার, আহমদ নগর, কুরুয়া, সোয়ারগাঁও, দয়ামীর, চকরবাজার, ছিলমানপুর, ইলাশপুর, গোয়ালাবাজার, শশারকান্দি, বেগমপুর, গজিয়া, সাদীপুর নামক স্থানে রাস্তাজুড়ে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। রশীদপুর থেকে কুরুয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার অংশের পুরো মহাসড়কজুড়েই ফাটল। দেবে যাওয়া এই স্থানগুলোতে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। কোথাও রাস্তার একপাশ ভেঙ্গে গেছে। ভাঙা রাস্তার পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল না করে ভালো দিক দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায় যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটছে। মাকড়শার জালের মতো ফাটল সৃষ্টি এবং দেবে যাওয়া মহাসড়কের অংশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো দায়সারা গোছের মেরামত করলেও তা কোনো কাজে আসছে না। মেরামতের কয়েকদিন পরই তা আবারো পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।
সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস মালিক কর্তৃপক্ষ জানান, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে। অভার লোডের গাড়ি চলাচলে সওজ কখনো বাধা না দেয়ায় এ পরিস্থিতির তৈরী হয়েছে। পরিসংখ্যান মতে, গত এক বছরে এ অঞ্চলে অর্ধশতাধিক ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক। আহতের সংখ্যা গণিত।
এব্যাপারে তাজপুরের তৌরিছ আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মহাসড়ক ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকমত মেরামত হচ্ছে না। ফলে আমরা যাত্রী সাধারন মারাত্মক ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। মহাসড়ক এখন মহা মরণপাঁদে পরিণত হয়েছে। দ্রুত সংস্কার করারর ব্যবস্থা করা হোক।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১লা জানুয়ারি প্রায় আড়াই’শ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আধুনিকায়ন কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০০৫ সালে। এক হাজার ১৭৮ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে ৬৫ শতাংশ অর্থের যোগানদাতা ছিল আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছিল। নির্মাণের পূর্বে রাজধানী ঢাকার সাথে সিলেটের দুরত্ব ছিল ২৫৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার। কিন্তু মহাসড়ক নির্মাণের ফলে দুরত্ব কমে আসে ৩৪ দশমিক ৪ কিলোমিটারে। এর মধ্যে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল ২৫ দশমিক ১ কিলোমিটার। ৩৯৬ টি অবকাঠামোর মধ্যে ৪৯ টি সেতু ও ৩৪৭ টি কালভার্টও অর্ন্তভূক্ত ছিল। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার ৬ মাসের মাথায় অধিকাংশ সেতু ও কালভার্টের মুখ দেবে যায়। আবার কোন কোন সেতুর মধ্যস্থানে ফাটল দেখা দেয়। পরবর্তীতে দফায় দফায় মহাসড়ক সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকার অনুমোদন হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।