Search
Close this search box.

আলহাজ্ব মনু মিয়া ছিলেন কর্মীবান্ধব নেতা

তাজ উদ্দিন :: ১ আগষ্ট ছিলো বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাবেক সভাপতি ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জননেতা জনাব আলহাজ্ব মনু মিয়ার ৭ম মৃত্যু বার্ষিকী। ২০১৪ সালের ১লা আগষ্ট তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে মৃত্যুবরণ করেন এবং পরবর্তিতে তাঁর স্বজনদের মাধ্যমে লাশ দেশে এনে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবর স্থানে দাপন করা হয়। জনাব মনু মিয়া বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগ এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমৃত্যু একাধিক বার দলের সভাপতির পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বশীল ছিলেন এবং অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সাথে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুৎত্থান সহ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সর্বোপরি ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করার জন্য পাকিস্তানীদের লেলিয়ে দেওয়া এ দেশীয় এজেন্ট রাজাকার, আলবদরদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী উনার পরিবারের সদস্যদের প্রতি অমানবিক আচরণের পাশাপাশি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের সময় আওয়ামীলীগের চরম দুর্দিনেও তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অনেক ঝুঁকি নিয়ে ভঙ্গুর দলকে অন্যান্য নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় পুনর্ঘঠন করেছেন। এ সময় সামরিক-বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে অনেক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি সব ধরনের লোভ লালসার উর্ধ্বে থেকে তৎকালীন সামরিক সরকারের (স্বৈরাচারের) রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে দলকে সংঘটিত করতে ভূমিকা রেখেছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আজ সেই দলের কতজন এই ত্যাগী নেতাকে স্মরণ রাখছেন, তাঁর সম্পর্কে জানেন বা জানার চেষ্টা করেন!

আজকে যারা দলের মধ্যে নিজের লোক খোঁজেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই জনাব মনু মিয়া ছিলেন এমন একজন কর্মীবান্ধব নেতা, যিনি কোন দিন দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নিজস্ব লোক খোঁজেন নাই। দলের নিবেদিত প্রাণ সকল নেতা-কর্মী-সমর্থক তাঁর নিজস্ব লোক ছিলেন। আমরা যখন রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখনও দেখেছি, মনু ভাই বিশ্বনাথ বাজারের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বাসিয়া নদীর ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকতেন, রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে, তাঁর কাছে ডেকে নিতেন, হাত ধরে কথা বলে ভাব জমাতেন, দিলু বাবুর হোটেলে নিয়ে চা খাওয়াতেন এবং সময় সুযোগ বুঝে দলের কর্মী-সমর্থক বানাতেন। এই ছিলেন আমাদের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মনু ভাই।

অনেকের কাছে শুনতে খারাপ লাগবে জেনেও বলছি, আজকে ঘরে ঘরে নেতা। দল যারা করেন সবাই নেতা, কর্মী সংখ্যায় খুবই কম। দলে কর্মী পরিচয় দেওয়ার মত লোক নেই বললেই চলে। দলে কর্মীর বড় অভাব। কর্মী যারা আছেন, তারাও কিছু কিছু নেতৃবৃন্দের আচার-আচরণে অসন্তুষ্ট । সবাই নিজস্ব লোক খোঁজেন, আর কর্মী-সমর্থকরা মনু ভাই, বজলু ভাই, আফসর ভাইয়ের মত নেতা খোঁজেন। এমন নেতা তো আর সব সময় পাওয়া যায় না। সৎ, নির্লোভ, অসাম্প্রদায়িক ও মহৎ গুণাবলী সম্পন্ন কর্মী বান্ধব আমাদের সেই শ্রদ্ধাভাজন প্রয়াত নেতা জনাব মনু মিয়ার বিদেহী আত্মা অনন্ত পরকালীন জীবনে যেন চিরশান্তি লাভ করে এবং মহান আল্লাহ তাঁকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন, কায়মন বাক্যে এ প্রার্থনা করি । আমিন।

লেখক: ব‌্যাংকার

আরও খবর