AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

নিখোঁজের ৯ বছর পূর্ণ : ইলিয়াস আলীর ফেরার অপেক্ষায় পরিবার

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: এপ্রিল - ১৭ - ২০২১ | ১১: ৪১ অপরাহ্ণ

এমদাদুর রহমান মিলাদ :: বিএনপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়ী চালক আনসার আলী নিখোঁজের ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে শনিবার (১৭ এপ্রিল)। এই ৯ বছরেও সন্ধান মেলেনি তাদের। এখনো ইলিয়াস আলী নিখোঁজের কারণ রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে আন্দোলনও ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়েছে।

নিখোঁজ হবার পর ইলিয়াস আলীর পরিবারের ভর করে দীর্ঘশ্বাসের কালোমেঘ। এখনো থামেনি মায়ের আহাজারী। শুকিয়ে গেছে তাঁর চোখের জল। সন্তান হারা বৃদ্ধা মাকে সান্তনা দিতে প্রায় প্রতিদিন গ্রামের বাড়িতে দলের নেতাকর্মীরা ছুটে আসলেও এখন আর আগের মত ইলিয়াস আলীর গ্রামের বাড়িতে নেতা-কর্মীদের নেই তেমন কোন আনাগোনা। আজো ফেরার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন ইলিয়াস আলীর বৃদ্ধা মা সূর্যবান বিবি, সহধর্মিনী তাহসীনা রুশদীর লুনা ও তার ছেলে মেয়েরা। তার সাথে গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর গাড়ী চালক আনসার আলীর পরিবারও আজো প্রতীক্ষায় আছে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি ফিরে আসবেন। গুমকৃতরা ফিরবে কি ফিরবেনা? এর কোন নিশ্চয়তা না থাকলেও স্বজনের অনন্ত কালের অপেক্ষার প্রহর কখনো শেষ হবেনা। যতক্ষণ পর্যন্ত না এসব গুম রহস্যের উদঘাটন হবে। পরিবারের একটাই দাবি তারা যে কোন মূল্যে ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ী চালক আনছার আলীকে অক্ষত এবং সুস্থ অবস্থায় তাদের মাঝে ফিরে পেতে চান।

নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পরিবার তাকে ফিরে পাবার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ এ নিয়ে হতাশ। তাঁর এক সময়ের সহকর্মী-সহযোদ্ধাদের অনেকেই ভুলতে বসেছেন ত্যাগী এই নেতাকে।

এ ব্যাপারে ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহমিনা রুশদীর লুনা বলেন, এক এক করে ৯টি বছর হয়ে গেলো ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হলো। আমাদের চোখে যতক্ষণ জল আছে ততক্ষণ শুধু প্রিয়জনের অপেক্ষায় অশ্রুবিসর্জন করবো। সরকারের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু সরকারের কর্মকান্ডে প্রমাণিত হয়েছে যে ইলিয়াস আলী গুমে সরকার নিজেই জড়িত। তাই তারা ইলিয়াস আলীর সন্ধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আল্লাহর আদালতেই বিচার দিলাম। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় হলে, জনতার সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ইলিয়াস রহস্যের উদঘাটন হবে। তিনি ইলিয়াস আলীসহ নিখোঁজ নেতাকর্মীদের অক্ষত অবস্থায় সন্ধান কামনার জন্য দলীয় নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানান।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে নিজ বাসায় ফেরার পথে রাজধানী ঢাকার মহাখালী থেকে নিখোঁজ হন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও তার বিশ্বস্থ গাড়ী চালক আনছার আলী। মধ্যরাতে মহাখালী এলাকা থেকে ইলিয়াস আলীর গাড়ীটি উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সময় থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছেন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ইস্যুতে ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল বিশ্বনাথে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হয় মনোয়ার, সেলিম ও জাকির। আহত হন অনেকেই। ঐ সংঘর্ষে বিক্ষুব্দ জনতা উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসায়-জিপগাড়িতে, বিভিন্ন ব্যাংক, মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার, বিপনিবিতানে হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করেছিল। এতে উপজেলা পরিষদের ১৯টি দপ্তরের প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

২২ ও ২৩ এপ্রিলের সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্বনাথে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামী করে দায়ের করা হয় ৬টি মামলা। এসব মামলায় বিশ্বনাথের ৮টি ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও অনেক সাধারণ মানুষ’সহ প্রায় ১৮ হাজার লোককে আসামী করা হয়। ৬ ইউপি চেয়ারম্যান’সহ শতাধিক নেতাকর্মী কারাবরণ করেন। ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ ইস্যুতে আন্দোলন করতে গিয়ে ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল পুলিশের সাথে জনতার সংঘর্ষ ও উপজেলা পরিষদের ভাংচুর-অগ্নি সংযোগের ঘটনায় আসামী হওয়ার কারণে ঐ বছরের ১ জুলাই উপজেলার ৭ ইউপি চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতের উচ্চ আদালতের রিটের মাধ্যমে তারা চেয়ারম্যান পদ ফিরে পান।

এদিকে, ইলিয়াস আলীর সন্ধান কামনায় গতকাল শনিবার বিশ্বনাথ উপজেলা এবং পৌর বিএনপির উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক গৌছ খান, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক বশির আহমদ, আহমেদ নূর উদ্দিন, প্রভাষক মোনায়েম খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া, বিএনপি নেতা ফরিদ মিয়া, আমির আলী, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সুরমান খান, সদস্য দুলাল মিয়া, পৌর যুবদলের আহবায়ক শাহ আমির উদ্দিন, সদস্য নাজমুল হোসেন শিমুল, যুবদল নেতা রিপন আহমদসহ বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো সংবাদ