।। ডাঃ মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ।।
করোনা জয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভালোবাসা, অবিচ্ছিন্নতা। মা-বাবার ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, সন্তানে ভালোবাসা, ভাই-বোনের ভালোবাসা ও বন্ধু-বান্ধবদের ভালোবাসা।
একটা পরিবারে একজন সদস্যের করোনা হলো। তখন পরিবারের অন্য সদস্যরা আতংকিত হবে না। তারা মনে করবে শত্রুসেনা ঢুকেছে, যুদ্ধ করতে হবে। এ যুদ্ধ শুধু রোগির নয়, পরিবারের সকলের। করোনার বিরুদ্ধে পরিবারের সকলের যুদ্ধ।
একজন করোনা রোগী যখন দেখে তার মা-বাবা তার পাশে, তার স্ত্রী-স্বামী, সন্তান, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব তার পাশে, তখন তার মনোবল অনেক গুণ বেড়ে যায়। আর এই মনোবলই তাকে করোনা জয় করতে সাহায্য করে।
মনে বিশ্বাস রাখুন, সকলের করোনা হয় না। ভাইরাস ঢুকে, সবাইকে আক্রান্ত করে না। আক্রান্ত করলেও সবাইকে কাবু করে না। খুবই অল্প সংখ্যক রোগী বেহাল অবস্থায় যায়। অতএব, আমরা আতংকিত না হয়ে সাহসের সাথে করোনা রোগীর চিকিৎসায় সহযোগিতা করি।
পরিবারে অপেক্ষাকৃত তরুণ সদস্য যারা, যারা তুলনামুলকভাবে স্বাস্থ্যবান, অন্য শারীরিক অসুখ থেকে মুক্ত, তাদেরকে প্রতিরক্ষা ব্যুহ (মাস্ক, ফেইস শিল্ড) নিয়ে রোগির পরিচর্যায় নিযুক্ত হতে হবে। রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে তিনফুট দুরত্ব বজায় রেখে। রোগীর ঔষধ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখুন, শতকরা ৮০-৯০ ভাগ রোগী বাসাতেই থেকে সাধারণ চিকিৎসায়, সাধারণ ঔষধ সেবন করে, শুধূ যত্ন ও পথ্য দ্বারা ভালো হয়ে যায়।
তবে কারো শরীর বেশি দুর্বল হয়ে গেলে, শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। তবে রোগী থেকে স্বজনদের বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। হাসপাতালের নির্জন আইসোলেশন রোগীকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে ফেলতে পারে। দ্রুত পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তাই হাসপাতালের আইসোলেশনেও স্বজনদের কেউ (তরুণ, স্বাস্থ্যবান) প্রতিরক্ষা ব্যুহ নিয়ে এটেন্ড করলে রোগির ভালো হওয়া অনেকটাই সহজ হয়।
করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের উচিত তরুণ স্বাস্থ্যবান এটেন্ডেন্ট এলাও করা। এতে চিকিৎসায় সহযোগিতা হবে, রোগি দ্রুত ভালো হবে।
মোটকথা, শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়েই অধিকাংশ করোনা রোগী ভালো করা সম্ভব। বিচ্ছিন্নতা, দূরে সরিয়ে রাখা, অবহেলা করার মাধ্যমে সাধারণ করোনা রোগীও খারাপ হয়ে যেতে পারে।
তাই কারো করোনা হয়েছে, অযথা আতংকিত না হয়ে পরিকল্পিত লড়াই শুরু করেন। ভালোবাসা, খোদার কৃপা নিয়ে রোগীর শুশ্রূষা করুন। করোনা যুদ্ধে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ জয়ী হচ্ছে। আল্লাহ রাহমানুর রাহিম। তিনি অবশ্যই মানবজাতিকে করোনার উপর পূর্ণাঙ্গ বিজয় দান করবেন।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।