AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

ঈদের ছুটিতে সিলেটের পর্যটন এলাকায় উপচেপড়া ভীড়

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: আগস্ট - ১ - ২০১৪ | ৪: ৫৩ অপরাহ্ণ

image_1356_167754

আহমাদ সেলিম/মনজুর আহমদ : ঈদ শেষ হয়ে গেলেও ফুরিয়ে যায়নি আনন্দের সবটুকু রেশ। পরিবার পরিজন, বন্ধুদের নিয়ে একটু বিমল আনন্দের জন্য মানুষ ছুটে চলেছেন লোকালয় ছেড়ে প্রকৃতির কাছাকাছি। শহর থেকে দূরে দিগন্তের ছায়াঘেরা নিরিবিলি কোথাও গিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন অনেকেই। প্রকৃতিপ্রেমী এসব মানুষের পদচারণায় মুখর এখন সিলেটের সবকটি পর্যটন এলাকা। তাদের মুখরতায় প্রকৃতির পরম মমতায় জেগে থাকা এই জায়গাগুলো হয়ে উঠেছে অন্যরকম সজীব, প্রাণবন্ত।

রাতারগুল, জাফলং, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, লালাখাল, পান্তুমাই, মাধবকুন্ড, হামহাম, সাতছড়ি উদ্যান, ভোলাগঞ্জ, ড্রীমল্যান্ড, এডভেন্সার ওয়ার্ল্ড, খাদিম জাতীয় উদ্যান, লাউয়াছড়া, ক্যামেলিয়া চা বাগান, মাধবপুর লেক, মাধবপুর ফ্রুটস ভ্যালী, প্রেমনগর পর্যটন কেন্দ্র, মনু ব্যারেজসহ সবগুলো পর্যটন এলাকায় বিপুল মানুষের উপস্থিতি যেন সেই অনিন্দ্য সুন্দরকেই জানান দিয়েছে।

ঈদ মানেই আনন্দ। ব্যস্ত জীবনের মাঝে ঈদের আনন্দ যেন মানুষের জন্য বাড়তি কিছু প্রশান্তি নিয়ে আসে। একটু অন্যরকম সময় কাটানোর আশায় শহর ছেড়ে দূরে একান্ত ভালোলাগার কোথাও ছুটে যায় মানুষ। পর্যটন এলাকাগুলোতে গিয়ে সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে সময় কাটিয়ে দিতে চান তারা। সুন্দর আর প্রকৃতিপ্রেমী এসব মানুষের মুখরতায় পর্যটন স্পটগুলোতে তাই উপচেপড়া ভীড়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়েসী মানুষ সামিল হয়েছেন সেই আনন্দের মহাযজ্ঞ।

ঈদের দিন থেকে শুরু করে গত বুধবার পর্যন্ত পর্যটন এলাকাগুলো ছিলো লোকেলোকারণ্য, উৎসবমুখর। সিলেট ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসকল পর্যটন এলাকায় ছুটে এসেছেন মানুষ। এজন্য শহরের অধিকাংশ আবাসিক হোটেলেও ছিলো পর্যটকদের ভীড়। পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঈদের ছুটিকে অন্যরকম আনন্দে উপভোগ করেছের তারা। ভারতের মেঘালয় পাহাড় ঘেষা প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলং, পান্তুমাই, বিছনাকান্দি আর বিশ্বের অন্যতম সোয়াম ফরেষ্ট রাতারগুল ঈদের দিন সকাল থেকেই মুখর হয়ে উঠে। বিভিন্ন বয়েসী মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে সুন্দর সময় উপভোগ করেন। খুব কাছ থেকে দেখেন আকাশ আর দিঘন্তজুড়া সবুজের নিবিড় প্রেম। নদীর স্রোত, গাছপালা, ঝরণা-প্রপাত, আর উতল বনভুমির মায়ায় নিমগ্ন প্রকৃতির সমস্ত নির্জনতা।

সিলেট শহর থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভারতের আসাম রাজ্যের মেঘালয় পাহাড়ের সীমান্ত ঘেষা এলাকা পর্যটন নগরী জাফলং। এখানে রয়েছে জেলা পরিষদ নির্মিত জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, তামাবিল জিরো পয়েন্ট, পার্বত্য অঞ্চলের মত আঁকাবাঁকা সড়ক পথ, ছোট-বড় অনেক দৃষ্টিনন্দন পাহাড়-টিলা, জাফলং পিকনিক সেন্টার, গ্রীন পার্ক, পাথর কোয়ারী, সীমান্তের ওপারে ঝর্ণা সংবলিত মেঘময় পাহাড়, সবুজ চা-বাগান, মুগ্ধকর খাসিয়া আদিবাসীদের বসত বাড়ি, পুঞ্জি এলাকায় জুমচাষ, সাতকরা জুম, কমলা বাগানের বিপুল সমাহার। কয়েক যুগ ধরে জাফলং এলাকা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন নগরী হিসাবে দেশ বিদেশের ভ্রমন পিপাসুদের কাছে পরিচিত। প্রতিদিন দেশী- বিদেশী পর্যটকরা প্রকৃতি কন্যা জাফলংকে এক নজর দেখতে জাফলংয়ে বেড়াতে আসেন। আর ঈদ এলে মানুষের ঢল থাকে চোখে পড়ার মতো। এবার ঈদেও লক্ষাধিক পর্যটকদের পদচারনায় জাফলং ছিলো মুখরিত। মামার দোকান থেকে শুরু করে বল্লাঘাট পর্যন্ত সহস্রাধিক পর্যটকের গাড়ি বহর।Sylhet-Pic.JPG_59911

এদিকে বিশ্বের অন্যতম জলারবন রাতারগুল সোয়াম ফরেষ্ট দেখতে ঈদে পর্যটকরা ভীড় করেন। বিরল প্রজাতির বহু গাছ-গাছালী, জীববৈচিত্র আর নিরব জলধারা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই। প্রকৃতিকন্যা পান্তুমাই ঝর্ণা দেখতে একইভাবে মানুষের সমাগম ঘটে ঈদের দিন। রস্তমপুর ইউনিয়নের দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারী পর্যটন নগরী বিছনাকান্দি এলাকায় পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষনীয়।

একইভাবে খাদিম জাতীয় উদ্যান, লালাখাল, লাউয়াছড়া, ক্যামেলিয়া চা বাগান, হামহাম, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, মাধবপুর ফ্রুটস ভ্যালী, প্রেমনগর পর্যটন কেন্দ্র, মনু ব্যারেজ, ড্রীমল্যান্ডসহ সিলেটের সবকটি পর্যটন এলাকায় ঈদের দিন ছিলো বিপুল মানুষের সমাগম।

এদিকে বড়লেখা থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা গোপাল দত্ত জানান, মানুষ সর্বদা মুক্তি পিয়াসী, চিরচঞ্চল। একটু অবকাশ পেলেই মানুষ ছুটে যায় দিগ দিগন্তে সৌন্দর্যের আকর্ষণে। জন্মগত ভাবেই মানুষ কৌতূহলী। তার সে কৌতূহল নতুন নতুন বিষয়ের প্রতি। প্রকৃতি ও মানুষের সৃষ্ট সৌন্দর্যের নানা নিদর্শন সে মানবীয় সত্তা দিয়ে অনুভব ও উপলব্ধি করতে চায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নামে খ্যাত মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চা বাগান, পাহাড়ী আদিবাসীদের জীবনধারা, হাকালুকি হাওর মোহময় আকর্ষণে টানে দর্শনার্থীদের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুপম সৃষ্টি মাধবতীর্থ মাধবকুন্ড। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের অবিরাম ধারা পতনের শব্দ সৃষ্টি করছে মায়াময় পরিবেশের। প্রকৃতি যেন বর্ণনার উপাচার নিয়ে সামনে দাঁড়ায়। পর্যটকদের জন্য উৎকৃষ্ট পর্যটন কেন্দ্র মাধবকুন্ড জলপ্রপাত।

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ উপজেলার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট এবারের ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ঈদের ছুটির সুযোগে সব ধর্ম-বর্ণের পর্যটকের আগমনে আনন্দ পুরিতে পরিণত হয়ে উঠেছে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ও আশপাশের এলাকা। পর্যটকদের আগমনে হাসি ফুটে উঠেছে মাধবকুন্ডের হোটেল-মোটেলসহ ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ী মহলে। ঈদের ৩য় দিন বৃহস্পতিবার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সরু রাস্তায় গাড়ীর দীর্ঘ লাইন। মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ কর্র্র্র্তৃক নির্মিত যানবাহন রাখার টার্মিনালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সরু রাস্তার উপর যানবাহন রাখায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। হাজারও পর্যটককে অনেক দূরে গাড়ী রেখে হেটে যেতে হয় জলপ্রপাতের কাছে। এদিকে কাঁঠালতলী থেকে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার কাজের জন্য পর্যটক বহনকারী বাস গুলো কাঁঠালতলী বাজারে থামিয়ে দেওয়া হয়।

মাধবকুন্ড বিট অফিসের কর্মকর্তা মির্জা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, ঈদের ছুটিতে গত মঙ্গলবার ও বুধবার ৭ হাজার পর্যটকদের আগমন ঘটেছে জলপ্রপাত এলাকায়। মঙ্গলবার ৩ হাজার বুধবার ৪ হাজার পর্যটক আসেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২’শ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় জলপ্রপাতের উপরে ও উচুঁ পাহাড়ে বিচরন করতে দেখা যায় অনেক পর্যটককে।

পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পাহাড়ে উঠার পথগুলোতে পুলিশের পাহারা থাকার পরও গোপন কোন স্পট দিয়ে উপরে উঠে যায় পর্যটকরা। আমরা উপরে উঠতে বারণ করলেও তারপরও পর্যটকরা পাহাড়ে উঠে যায়। প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাতে অবিরাম ঝর্ণাধারা আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যুগ যুগ ধরে এ পাহাড়ী জলকন্যা সৌন্দর্য পিপাসু ও ভ্রমনপিপাসু পর্যটকদের কাছে টানছে।

জেলার বড়লেখা উপজেলার ৮ নং দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের গৌড় নগর মৌজায় মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের অবস্থান। পাহাড়ি ছড়ার প্রায় ২’শ ফুট উপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে পানি। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারের ঈদে নারী-পুরুষ, শিশু ও বিদেশী পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। ভ্রমনপিপাসু পর্যটকদের জলপ্রপাতে এসছে ছবি তোলা, জলপ্রপাতের কুন্ডের পানিতে নেমে আনন্দে গোসল করতে দেখা গেছে। কয়েক যুগ ধরে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের অঝরধারা প্রবাহমান থাকলেও সত্তরের দশকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে এর পরিচিতি প্রকাশ পায়। জলপ্রপাত এলাকায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় রেষ্ট হাউস, পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে রেস্তোরা। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় স্থাপিত দেশের প্রথম ইকোপার্ক, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, আশপাশ এলাকার চা-বাগান, পাহাড়ি টিলা হাকালুকি হাওর দেশী-বিদেশী পর্যটক ও ভ্রমণ পিপাসুদের দিন দিন কাছে টানছে।

আরো সংবাদ