নিজস্ব প্রতিবেদক :: নতুন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন বার্ন অ্যান্ড প্লণাস্টিক সার্জন ও জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর সমন্বয়ক সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কৃতি সন্তান অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি এ সরকারে টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে গিয়ে শপথ পাঠ করেন এ চিকিৎসক।
পূণ্যভূমি সিলেটের আলোকিত জনপদ বিশ্বনাথে যুগ যুগ ধরে অসংখ্য কীর্তিমান পুরুষের জন্ম হয়েছে যাদের জন্য এলাকাবাসী গর্ববোধ করেন। তাদেরই একজন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি ১৯৪৬ সালের ২৪ নভেম্বর পিতার কর্মস্থল হবিগন্জ জেলায় জন্মগ্রহন করেন। দেশের এই খ্যাতিমান চিকিৎসকের পৈত্রিক নিবাস সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টুকেরকান্দি গ্রামে। তার পিতার নাম স্বর্গীয় শ্রী জিতেন্দ্র লাল সেন ও মাতার ছায়া সেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে এম.বি.বি.এস পাশ করে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ১৯৮১ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে ডি.এস.এস ডিপ্লোমা ইন স্পেশালাইজড সার্জারী ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর নিজ পেশায় গভীর মনোযোগী হয়ে মানুষকে আন্তরিক সেবা দিতে থাকেন। একজন বার্নও প্লাস্টিক সার্জারী বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি বাংলাদেশে চিকিৎসক মহলে এক নামে সুপরিচিত।
কর্মজীবনে তিনি জাতীয় প্রয়োজনে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারীর ওপর অধিকতর প্রশিক্ষণের জন্য পশ্চিম জার্মানী, যুক্তরাজ্য সহ পৃথিবীর অনেক দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করে তার আধুনিক অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধশালী করেন। গত কয়েক বছর পূর্বে রাজনৈতিক কারণে যানবাহনে পেট্রল বোমা সহ ও অন্যান্য কারণে ব্যাপক হারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে অগ্নিদগ্ধ মানুষের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। এসময় বার্ন বিভাগের জাতীয় প্রধান সমন্বয় কারী হিসেবে তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি বার্ন ইউনিট প্রতিষ্টায় তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। চিকিৎসা সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি তাকে ২০১৮ সালে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি রত্না সেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের রয়েছে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে । মেয়ে নবনিতা সেন যুক্তরাজ্যে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে সেখানে চাকুরী করছেন আর ছেলে অনাবিল সেন একজন চিকিৎসক। বিশ্বনাথের ইতিহাসে তিনি হলেন প্রথম কোন পূর্ণমন্ত্রী।
শপথপাঠ অনুষ্ঠানে নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি মন্ত্রী হব। এটা আমার কাম্য ছিল না। যাই হোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখে মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন। আমি তা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব।
তিনি আরও বলেন, বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ফোন পেয়ে আমি ভেবেছিলাম তার মনে হয় কোনো রোগী আছে এখানে। কিন্তু তার কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি তো বিশ্বাসই করি নাই। ভেবেছিলাম ভুয়া ফোন হতে পারে। তবে সত্যিই আমি মন্ত্রী হলাম। এটা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।