খাদ্য হিসেবে আলু নিয়ে গল্পের শেষ নেই। দেশ-কাল-পাত্র ভেদে আলুকে কেন্দ্র করে অনেক ধরনের গল্প চালু আছে। কিন্তু আলু দিয়ে বাতি জ্বালানো যাবে এমন কথা কেউ ভাবেনি। কিন্তু ভেবেছেন গবেষক রাবিনোভিচ। তার দাবি, একটি আলু দিয়ে টানা চল্লিশ দিন একটি এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড) বাতি জ্বালানো যাবে।
যেহেতু প্রসঙ্গটা বাতির, তাই এই প্রসঙ্গের সঙ্গে চলে আসে জ্বালানির কথা। বিশ্বে বিকল্প জ্বালানি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অনেক গবেষণা হচ্ছে। তেল-গ্যাস-কয়লা-ইউরেনিয়াম-প্লুটোনিয়াম ইত্যাদির পর জ্বালানি সঙ্কট নিরসনে কী করা হবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চলছে। তেমনি এক গবেষণা দল রাবিনোভিচ ও তার সহকর্মীরা। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের দাবি, আলুর ভেতর যথেষ্ট শক্তি আছে, আর সেই শক্তিকেই কাজে লাগিয়ে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব।
রাবিনোভিচ এ বিষয়ে বলেন, ‘একটি আলু থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তা দিয়ে অনেক কিছু করা না গেলেও, একটি মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ জাতীয় ডিভাইস চার্জ দেয়া যাবে।’
রাসায়নিক পদার্থ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে প্রথমত দুটি আলাদা ধাতব দণ্ডের(ইলেকট্রোড) প্রয়োজন। যার একটিকে বলা হয় অ্যানোড (পজিটিভ ইলেকট্রোড, অ্যানোড সাধারণত তামার তৈরি ধাতব দণ্ড) এবং অন্যটিকে বলা হয় ক্যাথোড যা সাধারণত সীসা বা দস্তার তৈরি। অ্যাসিডিক পদার্থকে সংশ্লেষণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব।
আলুতে যে জৈব অ্যাসিড থাকে তা থেকেও একই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।
মূলত ১৭৮০ সালে লুই গ্যালভানি নামের একজন বিজ্ঞানী এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি দেখতে পান, দুটি পৃথক ধাতুকে ব্যাঙের পায়ের সঙ্গে সংযোগ ঘটালে ব্যাঙের পা নড়ে। কিন্তু ঘটনাটি শুধু ব্যাঙ বা আলুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এমন অনেক পদার্থই আমাদের চারপাশে পাওয়া যায় যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। যেমনটা করেছিলেন আলেকজান্ডার ভোল্টা।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী অ্যালেক্স গোল্ডবার্গ বলেন, ‘আমরা মোট বিশটি ভিন্ন জাতের আলু নিয়ে গবেষণা করেছি। এবং আমরা ওই আলুগুলোর অভ্যন্তরের বিক্রিয়াও খেয়াল করেছি, যা আমাদের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করে।’
অনেকগুলো আলু দিয়ে একটি ব্যাটারি বর্তনী তৈরি করতে পারলে একটি সাধারণ বাসাবাড়িতে টানা সাত দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব বলেও দাবি করেছে ওই গবেষক দল।