AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

গোয়াহরি বিলে ঝপ ঝপা শব্দে মেতে উঠেনে সৌখিন শিকারীরা

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জানুয়ারি - ১৫ - ২০২৪ | ৯: ৩৫ অপরাহ্ণ

গোয়াহরি বিলে

এমদাদুর রহমান মিলাদ :: সিলেটের বিশ্বনাথে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের বিলে এ পলো বাওয়া উৎসব পালিত হয়েছে। শিকড়ের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের টানে প্রতি বছরই আয়োজন করা হয় এই উৎসবের। বাঁশ আর বেতের সমন্বয়ে তৈরী করা পলো ও উড়াল-চিটকি-ঠেলা জাল দিয়ে শীত উপেক্ষা করে এক সাথে মাছ শিকার করাই গ্রামবাসীর প্রধান এক আনন্দের উৎসব। তাই আনন্দের ওই উৎসব পালন করতে প্রতি বছর মাঘ মাসের অপেক্ষায় থাকেন গ্রামবাসী।

গোয়াহরি গ্রামের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রায় দু’শত বছর ধরে বাংলা বছরের প্রতি মাঘ মাসের পহেলা তারিখে এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পলো বাওয়াকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। এতে অংশগ্রহন করেন গ্রামের কয়েক শতাধিক সৌখিন মৎস্য শিকারী। প্রতি বছরের ন্যায় এবারের পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দিতে দেশে এসেছেন অনেক প্রবাসী ও স্বামী-সন্তান নিয়ে পিত্রালয়ে বেড়াতে এসেছেন গ্রামের অনেক মেয়েরা।

সরেজমিন বিলে গিয়ে দেখা যায়, কনকনে শীত উপেক্ষা করে সাতসকালেই বিলের ধারে জড়ো হয়েছেন শিকারীরা। এতে দলভুক্ত হয়েছে শিশু-কিশোরও। মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম পাশে নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের প্রহর গুনছেন সকলেই। সময় হলেই একযোগে ‘আনন্দ চিৎকার’ দিয়ে বিলে নামার অপেক্ষায় সবাই। উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে বিলের ধারে ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক জনতা। সকাল ১১টা হলেই ভূ-দৌড়ে পলো নিয়ে বিলে ঝাপ দেন শিকারীর দল। দীর্ঘসময় হীম শীতল জলে মাছ শিকারে মেতে উঠেন তারা। ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে চলতে থাকে পলো পাওয়া। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী এ ‘পলো বাওয়া উৎসবে’ অংশগ্রহনকারী সৌখিন শিকারীদের পলোতে ধরা পড়ে বোয়াল, কাতলা, রুই, কারপু, শউল, গণিয়া, মিরকা’সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। উৎসবে পলোর সাথে সাথে টেলা জাল (হাত জাল), উড়াল জাল, চিটকি জাল, কুচা’সহ মাছ শিকারের বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম নিয়ে মাছ শিকারে অংশ গ্রহন করেন অনেকেই। তবে পানি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকার কারণে বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই, এর সাথে কচুরিপানা থাকায় এবারের পলো বাওয়া উৎসবে মাছ শিকারের পরিমাণ ছিলো কম। তাই পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেওয়া অনেক কেই ঘরে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।

পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যকে যুগ যুগ ধরে আজোও বুকে ধারণ করে রেখেছেন গোয়াহরি গ্রামের বর্তমান প্রজন্মের বাসিন্দারা। তাই নিজেদের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর মাঘ মাসের পহেলা তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়ে আসছে বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব। আগামী ১৫ পর্যন্ত দিন পর্যন্ত চলবে ওই উৎসব। গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই পনের দিন বিলে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নেই কোন নিষেধাজ্ঞা। এজন্য ওই পনের দিনের ভিতরে বিলে গ্রামের যে কেউ হাত দিয়ে বা টেলা জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন। তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর ২য় ধাপে এক সাথে আবারও পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দিবেন গ্রামবাসী।

এবার অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে ঠিকমতো পলো বাইতে পারেননি অনেকেই। তবে মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলের ঝাঁপিয়ে পড়া শিকারীদের মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ করতে বিলের পারে আসা শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের পুরুষ-মহিলা এবং দূর থেকে আসা আত্বীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দিতে দেখা যায়।

সৌখিন মাছ শিকারী সাহিদুর রহমান বলেন, গত বছর ১৫টি মাছ শিকার করে ছিলাম। কিন্তু এবার মাত্র ১টি মাছ শিকার করেছি। কিসমতোও আছিল ১টা কাতলা, শিকার করছি।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলম খান বলেন, ছোট বেলা ৩টা মাছ শিকার করে ছিলাম। তা নিয়ে বাড়িতে অনেক আনন্দ হয়ে ছিল। দীর্ঘদিন পর আজ আবার পলো বাওয়াতে অংশ নিয়ে মাছ শিকার করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।

সৌখিন মাছ শিকারী তাজ উদ্দিন বলেন, বিলে পানি কম থাকায় কেউ মাছ শিকার করতে পারছে, আবার কেউ পারতেছে না। তবে আমি ২টি বোয়াল শিকার করতে পেরে আনন্দ লাগছে।

গ্রামে আসা আতœীয় সৌখিন মাছ শিকারী শামীম আহমদ বলেন, পলো বাওয়াতে অংশ নিতে খালার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। আর পলো বাওয়াতে অংশ নিয়ে ১টি বোয়াল শিকার করতে পেরে আনন্দই লাগছে।

৫ বছর পর সৌদি আরব থেকে দেশে আসা প্রবাসী গোলাম কামরান বলেন, দীর্ঘদিন পলো বাওয়া উৎসবে অংশ গ্রহন করা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। তাই এবারে দেশে এসে পলো বাওয়া উৎসবে যোগ পেতে পেরে খুবই আনন্দ পেয়েছি। আর মাছ শিকার করতে পেরে এর পরিধি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাছ শিকার কম হওয়ার ব্যাপারে গ্রামের প্রবীন মুরব্বী ময়না মিয়া বলেন, বিলের সাথে এলাকার নদী-নালার পানি চলাচল না থাকার কারনে দিন দিন বিলের পানি কমে গেছে। তাছাড়া কচুরিপানাও আছে প্রচুর। এসব কারণে এবার মাছ কম শিকার করতে পেরেছেন শিকারীরা।

আরো সংবাদ