বিশ্বনাথনিউজ২৪ :: সিলেটের বিশ্বনাথের খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেলিকোনা এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহির মো. হোসাইনকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী অপসারণ ও গভর্ণিং বডি (এডহক কমিটি) দ্রুত গঠনের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। গত রবিবার (৩০ অক্টোবর) ‘খাজাঞ্চী ইউনিয়নের সচেতন নাগরিকগণ’ এই স্মারকলিপি দেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেলিকোনা গ্রামে অবস্থিত এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা অর্ধশতাব্দী ধরে এতদঞ্চলের দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ দীর্ঘদিন ধরে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও নানা সবিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিবার, শিক্ষকমন্ডলী ও এলাকাবাসির বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করছেন। অধ্যক্ষ আবু তাহির মো. হোসাইনের নানা অপকর্মের কারণে মাদ্রাসার লেখাপড়ার পরিবেশ মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।
শুধু তাই নয়, বর্তমান শিক্ষাবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের বরাদ্দ দেওয়া মাদ্রাসার নতুন চারতলা ভবনের জায়গা নিয়ে তিনি নানা কুটকৌশল ও ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হন। পরে ভবন নির্মাণ কাজে বাধা দিলে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ সরকারি উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগে মামলা দায়ের করলে আবু তাহির মো. হোসাইনসহ ১৬জন আসামি আদালতে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অধ্যক্ষ আবু তাহির মো. হোসাইনের আত্মীয়-স্বজনরাসহ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মাদ্রাসার বিরোধিতা করে আসা কতিপয় ব্যক্তি তার এসব অপকর্মের সাথে জড়িত। ওই ব্যক্তিবর্গ মাদ্রাসার বিরোধীতা না করার জন্যে আদালতে মুচলেকা দিলেও মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির এডহক কমিটির পদগুলো অধ্যক্ষের পক্ষে নেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ জানুয়ারি মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির এডহক কমিটি গঠনের প্রস্তাব মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে অনুমোদন আসলে এলাকার জনগণ সাধারণ সভার মাধ্যমে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে শিক্ষক প্রতিনিধি প্যানেল, অভিভাবক সদস্য প্যানেল ও সভাপতি প্যানেল গঠন করে অনুমোদনের জন্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেন। অভিভাবক সদস্য প্যানেলটি ইউএনও কার্যালয়ে প্রেরণ করলে সেখানে ৩ নম্বার ক্রমিকে উল্লেখিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদানের জন্য অধ্যক্ষ আবু তাহির মো. হোসাইন তদবির করতে থাকেন। কিন্তু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্যানেলের ১ নম্বার ক্রমিকে উল্লেখিত ব্যক্তিকে সদস্য মনোনয়নের সুপারিশ করলে অধ্যক্ষ তার মাদ্রাসাবিরোধী চক্রের মাধ্যমে ইউএনও বরাবরে তিনি একজন পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তি উল্লেখ করে তার প্রেরিত প্যানেল বাতিলের আবেদন করেন। যা এখনো তদন্তাধীন। গত সেপ্টেম্বর মাসে একই ব্যক্তিবর্গের সাক্ষরে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে অধ্যক্ষ আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন। যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ওই অভিযোগপত্রে অধ্যক্ষকে একজন সরল ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ইউএনও বরাবরে তাকে সাময়িক বরখাস্তের করার প্রেরিত পত্রটিকে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। তারা ইউএনওকে এডহক কমিটির সভাপতি করার প্রস্তাব করেছেন। একই ব্যক্তিবর্গ একবার অধ্যক্ষকে পক্ষপাতদুষ্ট আরেকবার ধর্মপ্রাণ সহজসরল ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা কি তাদের সবিরোধী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ নয়? এ থেকে প্রতীয়মান হয়, অধ্যক্ষ আবু তাহির মো. হোসাইন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি।
অধ্যক্ষের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক অনিয়ম, ও নানা সবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এলাকাবাসি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অভিযোগ দায়ের করলে বেশ কয়েকটি তদন্তে প্রমাণিত হয়। মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের একটি তদন্তে মাদ্রাসার অর্থলোপাট বিষয়টি প্রমাণিত হলে অধ্যক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে পত্র প্রদান করলে তিনি দায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাকে তিরস্কার করে এবং আত্মসাৎ করা অর্থ মাদ্রাসার কোষাগারে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তিনি এখনো পর্যন্ত সেই অর্থ ফেরত দেন নাই। পরে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আরেকটি তদন্তে অধ্যক্ষের দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সরকারি আদেশ অমান্য, মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ প্রদানসহ শিক্ষকদের হয়রানির বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে সাময়িক বরখাস্তের জন্যে ইউএনও বরাবরে নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখানো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় অধ্যক্ষ আবু তাহির মো. হোসাইন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বর্তমান সরকারের কোনো নির্দেশনা তিনি মানছেন না। মাদ্রাসায় প্রায়ই হাজিরা দিয়ে খাজাঞ্চী ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্টারের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত রয়েছেন। মাদ্রাসার কোনো মুভমেন্ট রেজিষ্টার তিনি সংরক্ষণ করেন না। সপ্তাহে ৪০টি ক্লাস নেওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তিনি ৩৫টি ক্লাস নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন বিকেল ৩টা ২০মিনিটে মাদ্রাসা ছুটি দিয়ে দেন।
২০১৭ সালে অধ্যক্ষ আবু তাহির মো. হোসাইন ব্রেনস্ট্রোক করে প্রায় ৬মাস মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে, ২০১৯ সালে হার্টের রোগে আক্রান্ত হয়ে হার্টে রিং পরেন। এতেও কাজ না হলে তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। প্রকৃতপক্ষ তিনি একজন মানসিক ভারসাম্যহীর ব্যক্তি। যে কারণে তিনি মাদ্রাসা পরিচালনায় সম্পূর্ণ অযোগ্য। এভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। তাই অতি দ্রুত তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ কার্যকরা করার দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।