নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করে রীতিমত আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সদর ইউনিয়নের দু’বারের সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন।
তবে, সকলের ধারণা ছিল শেষ পর্যন্ত দলের নির্দেশনা মেনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবেন তিনি। কিন্তু, তা না করে উল্টো দল থেকেই পদত্যাগ করে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকেন জালাল। স্বতন্ত্র মেয়র পদে বরাদ্দ পান ‘হ্যাঙ্গার’ প্রতিক। শুরুতে দলছুট নেতাদের মত প্রায় একা একা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালালেও ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। তাকে গোপনে সমর্থন দেওয়া উপজেলা, পৌর ও যুক্তরাজ্য বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের বহু নেতাকর্মী হ্যাঙ্গার প্রতিকের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নামতে থাকেন।
অবশেষে, বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাতে পৌরসভার ৩ নম্বার ওয়ার্ডে বিপুল সংখ্যক কর্মী, সমর্থক ও ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বের জানান দেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জালাল উদ্দিন। ওই সভায় প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে তার পক্ষে মাঠে নামেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অংশ নেন যুক্তরাজ্য বিএনপিরও অনেক নেতা। যারা শুধুমাত্র জালাল উদ্দিনের পক্ষে মাঠে নামতেই দেশে এসেছেন বলে জানা গেছে। তবে, বিএনপির দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে জালাল উদ্দিন বিশ্বনাথ পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং তার পক্ষে বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মাঠে নামার বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। খোদ উপজেলা বিএনপির আরেকটি অংশ এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে কম লিখালিখি হচ্ছে না। তীর্যক মন্তব্য করছেন আওয়ামীপন্থী নেটিজেনরাও।
বিষয়টি নিয়ে সিলেট জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তিনি জানান, ‘কেউ দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, গতকাল বুধবার রাতে জালাল উদ্দিনের ওই নির্বাচনি উঠোন বৈঠকে তার সমর্থক-ভোটারদের পাশাপাশি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিতে দেখা যায়।
বিশ্বনাথ পৌরসভার ৩ নম্বার ওয়ার্ডের স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জিতু মিয়া। পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বশির আহমদের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জালাল উদ্দিন। তিনি তার বক্তব্যে পৌরবাসিকে হ্যাঙ্গার প্রতিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গৌছ খান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিএনপি দলীয়ভাবে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নিলেও বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আমরা কাউকে খালি মাঠে গোল করতে দেব না।’ জালাল উদ্দিনের নির্বাচনি উঠোন বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসা তার ছোট ভাই বিএনপি নেতা মইন উদ্দিন।
বক্তব্যে তিনি তার ভাইয়ের পক্ষে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন, জালাল উদ্দিন মেয়র নির্বাচিত হলে বিশ্বনাথের দক্ষিণপাড়ে পৌরভবন নির্মাণ করা হবে।
হাফেজ মুস্তাফিজ আহমদের ক্বোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সূচিত বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যের কলচেস্টার বিএনপি সভাপতি মিছবাহ উদ্দিন, বিশ্বনাথ পৌর বিএনপি সহসভাপতি ফারুক মিয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শামসুল ইসলাম, বিশ্বনাথ উপজেলা যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালিম সভাপতি, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুর রব, বিশ্বনাথ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান খালেদ, সেনারগাঁও গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি মইনুল হক, গন্ধারকাপন গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি বশির আহমদ, বিশ্বনাথ পুরান বাজার বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি আরশ আলী, পৌরসভার ৭ নম্বার ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি হাবিবুর রহমান নুনু। আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল আহমদ, পৌর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইমরান আহমদ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক জুনেদ আহমদ।
এ সময় ৩ নম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জয়নাল আবেদীন, রফিক আলী, রফিকুল ইসলাম ফিরোজ, ইমরান আহমদ সুমন। ১, ২ ও ৩ নম্বার সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিল্পী রানী দে প্রিয়াংকা ও নুরুন্নাহার ইয়াসমিন।