AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়ক এখন ‘গলার কাঁটা’

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: সেপ্টেম্বর - ১৯ - ২০২১ | ৮: ০০ অপরাহ্ণ

IMG 20210918 105820

নিজস্ব প্রতিবেদক :: প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর আঞ্চলিক সড়কের বিশ্বনাথ অংশের ৭ কিলোমিটার অংশ এখন ‘গলার কাঁটা’ হিসেবে পরিণত হয়েছে। সড়কের ১৯ কিলোমিটার সংস্কার করা হলেও এই ৭ কিলোমিটার কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগের নিত্যসঙ্গী। সড়কটি ভেঙে বড় বড় অসংখ্য গর্ত হলেও এনিয়ে চরম উদাসীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের দেখাও মিলছে না।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্বনাথ উপজেলার বাগিচাবাজার থেকে জগন্নাথপুর উপজেলার সীমানা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা একেবারেই বেহাল। ৭ কিলোমিটার সড়ক-ই যেন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বাগিচাবাজারের পশ্চিম থেকে চককাশিমপুর , কামালপুর , সমেমর্দান , পূর্ব দশঘর, পশ্চিম দশঘর , পীরেরবাজার, বাউশী , রায়কেলী , মিয়ারবাজার , চান্দভরাং এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বিপুল সংখ্যক গর্তের। গর্তগুলোর গভীরতা সড়ক থেকে নিম্নে ১ ফুট ও সর্বোচ্চ ৩ ফুট পর্যন্ত। বৃষ্টির পর সড়ককে আর সড়ক মনে হয় না, রূপ নেয় ছোট্ট নদীর মতো। বিশ্বনাথ উপজেলা অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পায় রাজধানী ঢাকার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওন এন্টারপ্রাইজ। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর শাওন এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। গত বছরের ১০ মে তাদের কাজের মেয়াদ শেষ হয়। এলজিইডির দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়কটির সংস্কার কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমাপ্ত করতে পারেনি। গেল জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে আর প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়না। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে আবারও কাজ শুরুর চেষ্টা করছে সড়কটির কর্তৃপক্ষ ।

জগন্নাথপুর উপজেলার সীমানা থেকে বিশ্বনাথ উপজেলার বাগিচাবাজার পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ৭ কিলোমিটার সড়ক যেতে যেখানে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগার কথা; সেখানে যাত্রীবাহী বাসের সময় লাগে ৪০ মিনিটেরও বেশি। তার সাথে শক্ত ঝাঁকুনি তো আছেই।

IMG 20210918 133217

সরেজমিনে সড়কে চলাচলকারী লোকজনের দুর্ভোগের চিত্র প্রত্যক্ষ করা গেছে। গর্তে পড়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো সিএনজি অটোরিকশা নষ্ট হচ্ছে। মাটিতে দেবে গিয়ে আটকে যাচ্ছে ট্রাক । বৃষ্টি হলে দিনে অন্তত: ৮-১০ টি যানবাহনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার খবর পাওয়া যায়। সড়কটিতে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ আর সীমাহীন কষ্টের শেষ নেই।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন , সড়কের জগন্নাথপুর উপজেলা অংশের মিরপুর বাজারের পশ্চিমের ছোট ব্রীজের এপ্রোচ দেবে যায়। একইভাবে দেবে যায় ইসহাকপুর ব্রীজের এপ্রোচ। পরে দেবে যাওয়া স্থান সংস্কার করা হয়। ইসহাকপুর হাইস্কুলের সামনে রাস্তা দেবে গেছে। রতিয়ারপাড়ায় ভেঙে গেছে সড়কের একাংশ।

তাদের অভিযোগ , নিম্নমানের কাজ করায় এগুলো দেবে গেছে। চলতি বছরের গত মার্চ-এপ্রিলে শেষ সময়ে দ্রুত কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কের মধ্যে কংক্রিট ফেলার পর কংক্রিট বসার জন্য সময় দেয়া হয়নি। তাড়াহুড়ো করে কার্পেটিং করার ফলে এখন একাধিক জায়গায় কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এলজিইডি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজের মানের প্রতি খেয়াল না দেয়ায় নিম্নমানের কাজ করেই দায়িত্ব শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জগন্নাথপুর অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পায় মাদারীপুরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হামিম ছালেহ (জেভি)। ২০ শতাংশ অতিরিক্ত দরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এরপর নানা টালবাহানা শেষে গত বছরের মার্চের শুরুতে সংস্কার কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। করোনাকালীন কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও পরে পুনরায় কাজ শুরু করে। কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় গত এপ্রিল পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে এলজিইডি। ওই মেয়াদে তারা পুরো কাজ শেষ করে।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের সংস্কারে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৮ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এর মধ্যে জগন্নাথপুর অংশের ১৩ কিলোমিটারের জন্যে বরাদ্দ দেয়া হয় ২৫ কোটি ৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। বিশ্বনাথ অংশের ১৩ কিলোমিটারের জন্যে ২৩ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৭১ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে এলজিইডি। হিসেব করে দেখা গেছে, প্রতি কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্যে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকারও বেশি। একটি সূত্র জানিয়েছে , শেষ পর্যন্ত এই বরাদ্দের চেয়ে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কার্যাদেশ অনুযায়ী, বর্তমান সড়কের সকল মালামাল তুলে প্রথমে গর্তের মধ্যে ১ ফুট বালু ফিলিং, এরপর ৯ দশমিক ২৫ ইঞ্চি সাব বেইস, পাথরসহ নানা উপকরণ দিয়ে গর্ত ভরাট করার কথা। কিন্তু, গর্তে বালুর পাশাপাশি পুরাতন সড়কের নিম্নমানের মালামাল দিয়েই পুরো সড়কটির খোড়া গর্ত ভরাট করা হয়। এর ফলে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয় । সড়কের জগন্নাথপুর অংশের সংস্কারে ২০১৯ সালে ১৩ লাখ, ২০১৮ সালে ১০ লাখ ও ২০১৭ সালে ৩ কোটি টাকার কাজ হলেও সড়কটির কাজ আর বেশিদিন স্থায়ী হয় না। লুটপাট আর অনিয়মের ফলে বছরের পর বছর ধরে যাত্রীদেরকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে সড়কটির কাজ করা হলেও কতদিন সড়কটি ভালো থাকবে! এ নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এলজিইডি’র বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ জানিয়েছেন , সোমবার থেকে কাজ শুরু হয়ে যাবে। বর্ষায় তো বেশ গর্ত হয়েছে। এগুলো ঠিকঠাক করে পুরো কাজ শেষ করতে কয়েক মাস লেগে যাবে। আমরা চেষ্টা করব যত দ্রুত কাজ শেষ করা যায়। আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই কাজ করবে।

এলজিইডি’র জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার সড়কের কাজে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন , সড়কে মানসম্মত কাজ হয়েছে। যেসকল জায়গায় নতুন মাটি ফেলা হয়েছিল; শুধু ওই জায়গার মাটি দেবে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এগুলো ঠিক করে দিতে বলা হয়েছে। বর্তমানে যেগুলো ভাঙাচোরা সেগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার করছে। এক বছর পর্যন্ত সড়কের কোথাও ভেঙে গেলে তা ঠিক করে দেয়ার নিয়ম রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।

সিলেট জেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর জানিয়েছেন, ‘বর্ষার ফলে কাজ করা যায়নি। আবার গেল জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্যে আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই অনুমোদন হয়ে যাবে , কারণ এটি একটি চলমান প্রকল্প। চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। আগামী মার্চে শতভাগ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

আরো সংবাদ