Search
Close this search box.

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রবাসীর নির্দেশে নিজেরাই পুড়িয়ে দেয় ৭টি বসতঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের মিরেরগাঁও গ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয় ৭টি পরিবারের বসত ঘর। এঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ ব্যার্থ হলেও অবশেষে আদালতের নির্দেশে ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন)।

পিবিআই’র দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে আসে গ্রামের মসজিদ নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজনদের ফাঁসাতে লন্ডন প্রবাসী আব্দুন নুরের পরিকল্পা ও নির্দেশে ওই ৭টি পরিবারের লোকজন নিজেরাই অগ্নিসংযোগ করে তাদের বসতঘর পুড়িয়ে দেয়। এঘটনায় জড়িত সন্দেহে মামলার দুই সাক্ষীকে পিবিআই আটক করলে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের মিরেরগাঁও গ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আহমদ আলী, আনোয়ার মিয়া, আব্দুল কাদির, আব্দুল মানিক, সিরাজ মিয়া, মৌরশ আলী ও মিন্টু মিয়া টিনসেড বসতঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা সংগঠিত হয়। এতে ওই ৭টি পরিবারের বসতঘরের সকল মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনার ২দিন পর ক্ষতিগ্রস্থ আহমদ আলীর স্ত্রী নুরুননেছা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৩, তাং-১২/১০/২০১৮ইং)। তবে মামলার এজাহারে নুরুননেছা উল্লেখ করেন, মিরগাঁও গ্রামে জামে মসজিদ নিয়ে দীর্ঘদিন দিন ধরে দু’টি পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে গ্রামের রবাই মিয়া, শায়েস্তা মিয়া, আসকর আলী, ফারুক মিয়া, লোকমান আহমদ, আশিক আলী, রুহুল, সেবুল, মুহিবুর রহমান আখতার, লিলু মিয়া, খালিক, শুকুর, আকজ্জুল ও বাবুল এর সাথে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্তরা গোপন বৈঠক করে অগ্নিসংযোগ করে বাদীনিসহ ওই ৭টি পরিবারের বসতঘর পুড়িয়ে দেয়। মামলা দায়েরের পর সন্দিগ্ধ অভিযুক্ত আশিক আলী ও লোকমান আহমদকে আটক করে থানা পুলিশ।

মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে আটক আশিক আলী ও লোকমান আহমদসহ সন্দিগ্ধ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অগ্নিকান্ডের ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কোন সুনির্দিষ্ট, নির্ভরযোগ্য ও পর্যাপ্ত তথ্য-স্বাক্ষ্য প্রমান না পাওয়ায় তাদেরকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দানের আবেদন জানিয়ে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট (চার্জশীট) প্রদান করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার এসআই মো. নূর হোসেন।

মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট (চার্জশীট) আদালতে উপস্থাপনের পর তাতে বাদী পক্ষ আপত্তি জানান। বাদীনির আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন) সংস্থাকে দায়িত্ব দেন আদালত। এরপর পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন) সিলেটের পুলিশ পরিদর্শক সুমন কুমার চৌধুরী দীর্ঘদিন মামলার তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। একপর্যায়ে তিনি অগ্নিকান্ডের ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন এবং ঘটনায় জড়িত থাকায় মামলার সাক্ষী মিরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের আব্দুল আজিজ ও মৃত লতিব আলীর পুত্র মৌরশ আলীকে চলতি বছরের ২৬ জুন আটক করে পিবিআই। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তাদের ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করেন পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা সুমন কুমার চৌধুরী। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ (রিমান্ড) শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে আব্দুল আজিজ ও মৌরশ আলী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন) সিলেটের পুলিশ পরিদর্শক সুমন কুমার চৌধুরী জানান, তদন্তে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হলো- মিরেরগাঁও জামে মসজিদের আধিপত্য নিয়ে লন্ডন প্রবাসী আব্দুন নুর পক্ষ ও গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের জের ধরে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় পঞ্চায়েত পক্ষের রবাই (মামলার এজাহারে সন্দিগ্ধ আসামী) ও প্রবাসী আব্দুন নুর পক্ষের (মামলার সাক্ষী) আব্দুল মানিকের মধ্যে ঝগড়া হয়। বিষয়টি প্রবাসী আব্দুন নুর অবগত হয়ে তার পক্ষের লোকজনকে রজব আলীর বাড়িতে মিটিং করার নির্দেশ দেন। এরপর ওই দিন রাত সাড়ে ১০টায় রজব আলীর বাড়িতে গোপন বৈঠক করেন আব্দুল মানিক, তার ভাই আব্দুর রউফ, চাচা রজব আলী, আব্দুল আজিজ ও মৌরশ আলী গংরা। ওই গোপন বৈঠকে প্রবাসী আব্দুন নুর মোবাইল ফোনে রজব আলী, আব্দুল আজিজদের নির্দেশ দেন, আব্দুল মানিক তার নিজের বাঁশের বেড়ার টিনের ঘর আগুণ লাগাইয়া পুড়িয়ে দিলে রবাইসহ প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া যাবে। এছাড়া প্রবাসী আব্দুন নুর তাদেরকে আশ্বাস দেন তাদের ঘর পুড়িয়ে গেলেও তিনি নতুন করে পাকাঘর তৈরী করে দিবেন। প্রবাসী আব্দুন নূরের নির্দেশ এবং পরামর্শে নিজ ঘরে আগুণ লাগিয়ে দেন আব্দুল মানিক ও তার ভাই আব্দুর রউফ গংরা। অগ্নিসংযোগের পর আব্দুল মানিকের চাচী মামলার বাদীনি নুরুননেছা ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং শোর-চিৎকার করতে থাকেন। ঘটনার পরবর্তীতে প্রবাসী আব্দুন নুর তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মামলার বাদীনিসহ ক্ষতিগ্রস্থ ওই ৭টি পরিবারের জন্য টিনশেড পাকা বসতঘর নির্মাণ করে দেন।

শীঘ্রই আদালতে মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট (চার্জশীট) প্রদান করা হবে বলে জানান পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক সুমন কুমার চৌধুরী।

আরও খবর