AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক বিষয় নিয়েই পঞ্চায়েতের সাথে বিরোধ মুক্তিযোদ্ধার!

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: এপ্রিল - ২৮ - ২০২১ | ৩: ৪৭ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ার কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীকে গ্রামের মসজিদ কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদান ও পঞ্চায়েত থেকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগটি সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করেছেন উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামবাসী। তাছাড়া ওই মুক্তিযোদ্ধার পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে একটি মহলের ইন্ধনে খুদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে বিএনপি-জামায়াত বানিয়ে মামলা দায়ের করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিন শ্রীধরপুর গ্রামে গেলে গ্রামের বাসিন্দা অনেকেই জানান, শ্রীধরপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীর ভাতিজা ও মেয়ের জামাই সুরমান আলীর সাথে জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীর বড়ভাই ইর্শ্বাদ আলীর। বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য গ্রামের পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির শরণাপন্ন হন ইর্শ্বাদ আলী। এরপর গত ২৭ মার্চ রাতে মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীর বাড়িতে বিষয়টি নিস্পত্তির লক্ষ্যে গ্রামের পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির মুরব্বিগণ এক শালিস বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে উভয় পক্ষের অভিযোগ শুনার পর একই পরিবারের দন্ধ হওয়ায় বিষয়টি আপোষে নিস্পত্তির জন্য সুরমান আলীর শশুর মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীকে দায়িত্ব দেন গ্রামের পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির মুরব্বিগণ। এরি মধ্যে ইর্শ্বাদ আলী ও সুরমান আলীর বিষয়টি নিস্পত্তির উদ্যোগ নেন গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া ও খছরু মিয়া নামের দুইজন ব্যক্তি। কিন্ত তাদের উদ্যোগ এবং মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীর ভূমিকায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় আবারও পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির মুরব্বিদের বৈঠকে শরণাপন্ন হন ইর্শ্বাদ আলী। তখন ঐ বৈঠক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হয় মসজিদ কমিটির সভাপতি আজাদ খানের।

মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীর অভিযোগ, তাকে মসজিদ কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে এবং তার পরিবার ও সুরমান আলীর পরিবারকে পঞ্চায়েত থেকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এমনটাই তাকে মুঠোফোনে জানান আজাদ খান।
এরপর গত ১১ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলী এবং ১৪ এপ্রিল তিনি বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত করা হয় শ্রীধরপুর গ্রামের সোলেমান খান বাবুল, আমিরুল ইসলাম খছরু, আজমল খান, আজাদ খান, আহমদ খান, দিলদার খান ও মুজিবুর রহমান খানকে।

অভিযুক্ত সোলেমান খান বাবুল, আজাদ খান, আহমদ খান ও মুবিজুর রহমান খান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও পুলিশ সুপারের কাছে প্রদানকৃত লিখিত অভিযোগে তাদেরকে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলী উল্লেখ করেন, জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাকে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ায় তারা ২৬ মার্চে হেফাজতের তান্ডব দেখিয়ে বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত মনে করে তাড়া হুড়ো করে ২৮ মার্চ রাতে গুটি কয়েকজন বৈঠক করে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে তাকে মসজিদ কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদান ও সমাজচ্যুত করা হয়।

অপরদিকে, অভিযুক্তদের দাবি মসজিদ পরিচলনা কমিটির ৭ সদস্যে একজন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলী। গ্রামের বিভিন্ন বিষয় এই কমিটির মাধ্যমেই নিস্পত্তি হয়ে থাকে।

ইর্শ্বাদ আলী ও সুরমান আলীর মধ্যকার বিরোধ আপোষে নিস্পত্তির জন্য তাদের পরিবারের সদস্য হসেবে মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীকে মসজিদ কমিটি ও পঞ্চায়েতের পক্ষ হতে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্ত ইন্তাজ আলীর ভূমিকায় তার বড়ভাই ইর্শ্বাদ আলী অসন্তুষ্ট হওয়ায় তিনি আবারও মসজিদ কমিটি ও পঞ্চায়েতের মুরব্বিদের শরণাপন্ন হন। তখন পঞ্চায়েতের বৈঠক থেকে সভাপতি আজাদ খান মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীর কাছে ফোন করে আবারও তাদের পারিবারিক বিষয়টি নিস্পত্তির করে দিতে সুপারিশ করেন। কিন্ত এতে ইন্তাজ আলী রাগান্নিত হয়ে উঠেন। এসময় তিনি বিরোধটি নিস্পত্তি করতে অপারতা প্রকাশ করে মসজিদ কমিটি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা জানান।

মসজিদ কমিটির সভাপতি আজাদ খানসহ গ্রামের মুরব্বিরা দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীকে পঞ্চায়েতের পক্ষ হতে সমাজচ্যুত করা হয়নি এবং তাকে সমজিদে আসা যাওয়ার পথে কোন প্রকাশ বাঁধা কিংবা শারীরিক বা সামাজিকভাবে হেনস্তা করা হয়নি। গ্রামের সকল মানুষ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

এদিকে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীও জানান, তার ভাতিজা-মেয়ের জামাই সুরমান আলী ও বড়ভাই ইর্শ্বাদ আলীর পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করেই মূলত পঞ্চায়েতের সাথে এই বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে গ্রামের সকলের সাথেই তার সু-সম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তো নয়ই, এমনকি ব্যক্তিগতভাবে কোন দিনও গ্রাম/পঞ্চায়েতের কারো সাথে তার বিরোধ ছিলো না আর বর্তমানেও নেই। পঞ্চায়েতের লোকজনদের সাথে এই বিরোধ ও দূরত্ব সৃষ্টির জন্য তিনি গ্রামের কথিপয় লোককে দায়ী করেন।

আরো সংবাদ