নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিশ্বনাথে যৌতুক না দেওয়ায় স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে মুক্তার আলী (৪৯) নামের এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের নওধার পূর্বপাড়া গ্রামের হাজী মোশাহিদ আলীর পুত্র। এঘটনায় নওধার মাঝপাড়া গ্রামের চাঁন্দ আলীর মেয়ে ও সাতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছাঃ স্বপ্না বেগম (৩০) বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের স্বামী মুক্তার আলীকে একমাত্র অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৫, তাং- ০৭/০৪/২০২১ইং।
দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বাদী স্বপ্না বেগম উল্লেখ করেন, তার স্বামী যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুক্তার আলী একজন প্রতারক প্রকৃতির লোক। তিনি (মুক্তার) লন্ডনে অবস্থান করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কৌশলে প্রতারণা করে একাধিক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। ২০১৯ সালে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক পারিবারিক ও সামজিকভাবে স্বপ্না বেগমকে বিয়ে করেন মুক্তার আলী। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে হলেও পারিবারিক বিভিন্ন ব্যস্থতার অজুহাত দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন মুক্তার আলী। তিনি বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রারী না করেই ৪মাস পর যুক্তরাজ্যে চলে যান। তিনি চলে যাওয়ার পর নিজ পিত্রালয়ে বসবাস করেন স্বপ্না বেগম। কয়েক মাস পর তাদের ঘরে একটি সন্তান জন্ম নিলেও সে জন্মের এক সপ্তাহ পর মারা যায়। যুক্তরাজ্যে থাকাবস্থায় বিয়ের কাবির রেজিষ্ট্রীর কথা বললে তখন থেকে স্বপ্নার সাথে মুক্তার আলী খারাপ আচরণ শুরু করেন এবং স্বপ্নাকে স্কুল থেকে চাকুরী ছেড়ে দিতে বলেন। এতে স্বপ্না অনিহা প্রকাশ করলে তার সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন মুক্তার।
এরপর ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তার দেশে ফিরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে পিত্রালয় থেকে স্ত্রী স্বপ্নাকে বাড়িতে (শশুরালয়) ফিরিয়ে নেন এবং বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রী সম্পন্ন করেন। কিন্ত কাবিন রেজিষ্ট্রী করাকে কেন্দ্র করে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী স্বপ্নাকে মারপিট করাসহ শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন মুক্তার। এরি মধ্যে তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার এলাকার আমিনা বেগম নামের আরেকজন মেয়েকে বিয়ে করে সিলেট শহরের একটি ভাড়াটিয়ে বাসায় রাখেন এবং রাত্রিবেলা মাদকদ্রব্য সেবন করে প্রতিনিয়ত স্বপ্নাকে নির্যাতন করেন মুক্তার। তিনি মাদকাসক্ত হওয়ায় মাদকদ্রব্য ক্রয় করতে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি সুদে টাকা ধার নিতেন এবং ওই সুদের টাকা পরিশোধ ও মাদক ক্রয় করতে স্ত্রী স্বপ্না বেগমকে চাপ সৃষ্টি করে তার বেতনের জমানো আড়াই লাখ টাকা নেন মুক্তার। এপর পিতার কাছ থেকে আরও ৫লাখ টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার দাবি করলে, তাতে স্বপ্না রাজি না হওয়ায় ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তাকে নির্যাতন ও মারধর করে গুরুতর জখম করেন করেন মুক্তার। পরদিন স্বপ্নার কর্মরত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে স্বপ্নার পিতা শশুরালয় থেকে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই ঘটানার পর থেকে স্বপ্না পিত্রালয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
গত ১৮ মার্চ এলাকার গণ্যমান্য মুরব্বিদের উপস্থিতিতে শালিস বৈঠকে কোনপ্রকার নির্যাতন না করার অঙ্গিকার করে স্ত্রী স্বপ্নাকে আবারও বাড়িতে নিয়ে যান মুক্তার। কিন্ত বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর যৌতুকের টাকা দাবি করে আবারও তাকে নির্যাতন করতে থাকেন এবং গত ৫ এপ্রিল উত্তেজিত হয়ে ঘরের আসবাপত্র ভাংচুর ও স্বপ্না বেগমকে মারধর করে আহত করেন মুক্তার। এঘটনায় স্বপ্না বেগম বাদী হয়ে বুধবার (৭ এপ্রিল) থানায় মামলা দায়ের করলে অভিযুক্ত মুক্তার আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামী মুক্তার আলীকে বুধবার বিকেলে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।