এমদাদুর রহমান মিলাদ :: সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে বুধবার (৩১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিশ্বনাথ পৌর শহরের পূর্ব চানসিকাপন গ্রামের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চেরাগ আলীর স্ত্রী রাহেলা বেগম (৫০) ও তাদের মেয়ে কামরুন নেছা শিপা (২০) হন। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার খবর মুহুর্তেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে চাঁনশিকাপন গ্রামসহ পুরো পৌর শহরে।
দূর্ঘটনার পরই ডাঃ চেরাগ আলী জানতে পারেন তার স্ত্রী রাহেলা বেগম মারা গেছে আর ছোট মেয়ে কামরুন নেছা শিপা মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কিন্ত তাকে এখনও জানানো হয়নি যে, তার আদরের মেয়ে শিপাও চিরদিনের জন্য চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
বুধবার রাত ৯টায় হাসপাতাল থেকে নিহত মা ও মেয়ের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। বসতঘরের একটি কক্ষের বসে ডাঃ চেরাগ আলী কান্না আর আহাজারি করছেন আর ব্যাকুল হয়ে বার বার সবার কাছে চানতে চাইছেন তার মেয়ে শিপা এখন কেমন আছে, সুস্থ আছে তো?। অথচ পাশের কক্ষেই রাখা হয়েছে শিপা ও তার মা রাহেলা বেগমের মরদেহ। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্খায় চেরাগ আলীকে এখনও তার মেয়ের মৃত্যুর সংবাদটি জানাতে পারছেন না স্বজনেরা। খবর পেয়ে বাড়িতে আসা লোকজন বাকরুদ্ধ। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন উপস্থিত সকলেই।
৪ ভাই-বোনের মধ্যে শিপা ছিলেন সবার ছোট। তার বড় বোন ডাঃ মেহেরুন নেছা রিপা ঢাকা বার্ডেম হাসপাতালের সহকারী সার্জন, বড় ভাই ডাঃ আবুল কালাম আজাদ মেডিসিন এফসিপিএস শেষ বর্ষে পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের সন্ধানী ডিজিটাল ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখেন এবং আরেক ভাই আবুল খয়ের সাজাদ এলএলবি সম্পন্ন করে সিলেট জজ কোর্টে প্রেকটিস করছেন। শিপারও স্বপ্ন ছিলো পড়ালেখা করে বোন ও ভাইদের মতো প্রতিষ্ঠিত হবে। সে এবার সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ভাই ও বোনদের মধ্যে সবার ছোট হওয়ায় শিপা ছিলো সকলের আদরের। আর তাইতো তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনেরা।
নিহতের চাচাতো ভাই ও বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানান, খালাতো বোনের বিয়েতে অংশগ্রহন করতে বুধবার বিকেলে মায়ের সঙ্গে দক্ষিণসুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের রুস্তুমপুর গ্রামে খালার বাড়িতে যাচ্ছিলেন শিপা। তাদের বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের সামনে পৌছামাত্র পিছন দিক থেকে আসা একটি হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস বাস সজোরে ধাক্কা দেয় তাদের অটোরিকশাকে। এসময় ঘটনাস্থলেই মারা যান শিপার মা রাহেলা বেগম ও অটোরিকশা চালক শামীম মিয়া এবং গুরুত্বর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মারা যান কামরুন নেছা শিপা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পূর্ব চাঁনশিকাপন জামে মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহে নিহতদের জানাযারা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রাহেলা বেগম ও তার মেয়ে কামরুন নেছা শিপার দাফন সম্পন্ন করা হবে।