AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

ছিনতাই নয়, সায়মনকে হত্যা করাই ছিলো আসল লক্ষ্য : গ্রেফতার ৩

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: মার্চ - ২৩ - ২০২১ | ৯: ১২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিশ্বনাথ পৌর এলাকার বিশ্বনাথ-জানাইয়া খেলার মাঠে যাওয়ার পথিমধ্যে শুকুর আলীর বাসা সংলগ্ন স্থানে গত ২০ মার্চ রাত ১০.২০টার দিকে ছুরিকাঘাতে খুন হন তরুণ ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন সায়মন (২৫)। ঘটনার সময় নিহত সায়মনের সাথে থাকা তার বন্ধুরা ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সায়মনের মৃত্যু হয়েছে জানালেও, নিহতের পরিবারের দাবি ছিনতাইর ঘটনা সাঁজানো, বন্ধুরা মিলে পরিকল্পিতভাবেই সায়মনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে।

এঘটনায় নিহতের বড় ভাই ময়নুল ইসলাম সুমন বাদী হয়ে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলা নং ২৭ (তাং ২২.০৩.২১)।

মামলার অভিযুক্তরা হলেন- পৌর শহরের উত্তর মশুল্ল্যা (জানাইয়া) গ্রামের মনোহর আলীর পুত্র এনাম উদ্দিন (২৩), মোস্তাব আলীর পুত্র তাহিদ আলী (২৪), আব্দুল মছব্বিরের পুত্র আফজাল হোসেন লায়েক (১৯), মৃত তাহির উল্লার পুত্র ফয়েজ আহমদ (২৪) ও দক্ষিণ মশুল্ল্যা (জানাইয়া) গ্রামের তোরাব আলীর পুত্র তারেক আহমদ (২১)। ঘটনার পর পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্ত লায়েক, ফয়েজ ও তারেককে আটক করে থানা পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে ওই তিন জনকে সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে থানা পুলিশ।

লিখিত এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, একই গ্রামে বাড়ি হওয়ার কারণে বাদীর ছোট ভাই ইমরান হোসেন সায়মনের সাথে চলাফেরা করার কারণে গ্রেপ্তারকৃত লায়েক, ফয়েজ ও তারেক তাদের বাড়িতে এবং নিহতের মুদির দোকানে আসা যাওয়া করত। মামলার প্রধান দুই অভিযুক্ত এনাম-তাহিদও বাদীর ভাইয়ের দোকানে আসা-যাওয়া ও বাজার-সদাই নিত। তবে অভিযুক্ত এনাম-তাহিদের সাথে গ্রেপ্তারকৃত লায়েক-ফয়েজ-তারেকদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো এবং তাহারা এক সাথে চলাফেরা করত। অভিযুক্ত এনাম-তাহিদ চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার কারণে বাদীর নিহত ভাই (সায়মন) তাদেরকে (এনাম-তাহিদ) বাঁধা নিষেধ দিতেন। এনিয়ে এনাম ও তাহিদের সাথে ইমরান হোসেন সায়মনের মাঝে মধ্যে কথাকাটাকাটি হতো। এনিয়ে অভিযুক্তরা সায়মনের উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। এর জের ধরে মামলার প্রধান দুই অভিযুক্ত এনাম-তাহিদ তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু লায়েক-ফয়েজ-তারেকদের সাথে পরাপর্শ করে সায়মনকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করেন। আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ মার্চ সন্ধ্যার পর গ্রেপ্তারকৃত লায়েক, ফয়েজ ও তারেক বাদীর ছোট ভাই সায়মনকে বিশ্বনাথ সদরে নিয়ে আসে এবং একটি রেষ্টুরেন্টে এক সাথে চারজন হালিম খায়। হালিম খেয়ে তারা এক সাথে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেখে উপজেলা পরিষদ পয়েন্টে জামাল উদ্দিনের দোকানে এক সাথে চারজন (লায়েক, ফয়েজ, তারেক, সায়মন) পান-সুপারী খায়। পান-সুপারী খেয়ে রিক্সাযোগে বাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও লায়েক-ফয়েজ-তারেক বাদীর ভাই সায়মনকে উপজেলা পরিষদের মসজিদের সামন থেকে কাঁচা রাস্তা দিয়ে শুকুর আলীর বাসার দিকে নিয়ে যায়। কারণ তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযুক্ত এনাম ও তাহিদ ঘটনাস্থলের আশপাশে অপেক্ষমান ছিলো।

ঘটনাস্থলে ঘটনার সময় পৌঁছা মাত্র এনাম ও তাহিদ সায়মনকে দাড় করিয়ে নারী সংক্রান্ত ও তাদের কর্মকান্ড নিয়ে সায়মনের সাথে তর্কাতর্কি শুরু করে। তাদের তর্কাতর্কির সময় সায়মনকে কোন সহযোগিতা না করে গ্রেপ্তারকৃত লায়েক-ফয়েজ-তারেক নিরব ভূমিকা পালন করে। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে এনাম ও তাহিদের সাথে সায়মনের হাতাহাতি শুরু হলে এনাম-তাহিদকে সাহায্য করতে জোরপূর্বক সায়মনের হাত-পা-মুখ চেপে ধরে রাখে লায়েক-ফয়েজ-তারেক। আর এসময় মামলার প্রধান অভিযুক্ত এনাম নিজের কাছে থাকা চাকু দিয়ে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সায়মনের বুকের বামপাশের স্বজোরে ছুরিকাঘাত করে। এরপর সায়মনের মৃত্যু নিশ্চিত করে অভিযুক্তদের ৩ জন (এনাম-লায়েক-তারেক) ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং অপর ২ জন (তাহিদ-ফয়েজ) হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখ্যাতে প্রবাহিত করার জন্য ছিনতাইয়ের নাটক সাজানোর চেষ্টা করে।

এঘটনায় থানায় মামলা দায়ের ও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করার সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ শামীম মুসা বলেন, মামলার প্রধান দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরো সংবাদ