বিশ্বনাথনিউজ২৪ :: সিলেটের বিশ্বনাথে কৃষি জমিতে পানি সেচ দিতে গিয়ে উপজেলার চাউলধনী হাওরের কান্দিকাটার খাল নামক স্থানে হাওরের ইজারাদার পক্ষের (সাইফুল গংদের) হামলায় ঘটনাস্থলেই ছরকুম আলী দয়াল (৭৫) নামের এক কৃষক নিহতের ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে বিশাল প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর সন্ধ্যা নিহত কৃষকের ভাতিজা আহমদ আলী বাদী হয়ে সাইফুল আলমকে প্রধান অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহবায়ক আবুল কালামে সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আজিজের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা মুহিবুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আমির আলী। বক্তব্য রাখেন আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক হাজী আরিফ উল্লাহ সিতাব, শামসুদ্দিন মেম্বার। শুরুতে ক্বোরআন তেলাওয়াত করেন ক্বারী ইউনুছ আলী বেলাল।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, ‘চাউলধনী হাওরের ইজারাদার জলদস্যু সাইফুল আলম তার লোকজন নিয়ে বৃহস্পতিবার চাউলধনী হাওরে কৃষক ছরকুম আলী দয়ালকে হত্যা করেছে। অনতিবিলম্বে এই হত্যাকান্ডের মূল হোতা সাইফুলসহ সকল হত্যাকারীদেরকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। না হলে আগামীতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।’
এদিকে নিহত কৃষক ছরকুম আলী দয়ালের লাশ সামনে রেখে প্রতিবাদ সভা শেষে আসরের নামাজের পর পরই সভাস্থলে নিহত কৃষকের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মরহুমের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, বিশ্বনাথ উপজেলার সবচেয়ে বড় হাওর চাউলধনীতে নিজের জমিতে পানি সেচ দিতে গিয়ে ইজারাদার পক্ষের (সাইফুল গংদের) হামলায় ঘটনাস্থলেই ছরকুম আলী দয়াল (৭৫) নামের এক কৃষক নিহত হন। উভয় পক্ষে আহত হন প্রায় ১৫ জন। ঘটনার পর পরই অভিযান চালিয়ে থানা পুলিশ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের টিল্লাপাড়া গ্রামের তাহিদ আলীর পুত্র আসাম উদ্দিন (২৬), মাহফুজ আলীর পুত্র হাফিজ সায়েদ আহমদ (২০) ও দশপাইকা গ্রামের মৃত মছদ্দর আলীর পুত্র হুশিয়ার আলী (৩৬)’কে আটক করে।
এলাকাবাসীর দাবী, প্রতি বছর এই হাওরে কয়েক কোটি টাকার ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্ত এবছর শর্ত ভঙ্গ করে ইজারাদার কর্তৃক পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি সেচ করে হাওরের জলমহালে মাছ ধরায় এবার পুরো হাওরে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চলসহ শুকিয়ে গেছে হাওরের ষোলটি বিল, ত্রিশটি খাল, এবং নালাসহ ছয় শতাধিক পুকুর। পানির অভাবে জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে চাষাবাদের জন্য তৈরী করা অধিকাংশ বীজতলা। এতে জীবন-জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওর পাড়ের ২৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক। তাই হাওরের ইজারা বাতিল, সীমানা নির্ধারণ এবং সুইসগেইট নির্মাণসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে পালিত হয়েছে একাধিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা।