AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথে সুরমা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: নভেম্বর - ২৮ - ২০২০ | ১১: ২২ অপরাহ্ণ

বিশ্বনাথনিউজ২৪ :: সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় মাহতাবপুর ও রাজাপুর, পরগণার বাজার এলাকায় সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙন রক্ষায় ১২০ কোটি টাকা ৭২ লাখ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ৪ টি ধাপে পর্যায়ক্রমে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে প্রায় ৩৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশ্বনাথ অংশের মাহতাবপুর ও পরগণার বাজার এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।

শনিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মোকাব্বির খান।

লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ এনামুল হক এনাম মেম্বারের সভাপতিত্বে ও মেম্বার ফয়সল আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি মোকাব্বির খান বলেন, কিছু অসৎ আমলা ও দূর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী দেশটাকে বিক্রি করার প্রচেষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে তাদেরকে প্রতিহত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে জণগনের কল্যাণে সবাইকে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে গ্রহন করা সরকারের সকল উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাতে শতভাগ সচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয় সেদিকে সবাইকে স্বজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিটি কাজের জবাবদিহীতা জনগনকে দিতে হবে। তাই প্রকল্পের কাজ যেন শতভাগ নিশ্চিত হয় সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিদের্শনা প্রদান করেন। আর কাজে অনিয়ম-দূর্নীতি হলে এলাকার জণগনকে সাথে নিয়ে সকল অনিয়ম-দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম নিলয় পাশা, বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী, বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। বক্তব্য রাখেন বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রনঞ্জয় বৈদ্য অপু, সাংবাদিক জাহঙ্গীর আলম খায়ের, সমাজসেবক আব্দুস শহীদ, লামাকাজী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল রব ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান।

এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য চমক আলী, মো. নুরুজ্জামান, মকসুস আহমদ মিলন, হেলাল আহমদ, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক এমদাদুর রহমান মিলাদ, সদস্য নুর উদ্দিন, সংসদ সদস্যের একান্ত সহকারী কয়েছ মিয়া, এপিএস অসিত রঞ্জন দেব, সাংবাদিক আশিক আলী, নবীন সুহেল, আক্তার আহমদ সাহেদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০০০ সাল থেকে এপর্যন্ত প্রায় কবরস্থান, মাজার, মসজিদ, বাজারসহ শতাধিক বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহারা পরিবারগুলো অন্যত্র বাড়িঘর তৈরী করলেও নদীর ভাঙ্গন থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছেন না। ধীরে ধীরে সেই সব বাড়ি-ঘর ও বিলীন হয়ে যাচ্ছেন। ফলে গৃহহারা হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার। আতংকে রয়েছেন পুরো গ্রামবাসী। কয়েক বছর পূর্বে মাহতাবপুর গ্রামের পশ্চিম দিকে নদী ভাঙ্গন রোধে ব্লক বসানো হয়। এরপর পূর্ব দিকে ভাঙ্গন বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালের মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীর ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী।

২০১০ সালে সিলেট-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীর আহবানে নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন তৎকালীন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তিনি পরিদর্শন করে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহনের আশ্বাস দেন।

এরপর ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল তৎকালীন সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়ার আহবানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী বীরপ্রতিক নজরুল ইসলাম (অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্ণেল), মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহা-পরিচালক, অতিরিক্ত মহা-পরিচালক, সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। নদী ভাঙ্গন রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে বলে পরিদর্শনকালে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারী মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সঙ্গে নিয়ে লামাকাজী সুরমা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পরিদর্শনকালে তিনিও নদীর ভাঙন রক্ষায় প্রকল্প গ্রহন করা হচ্ছে বলে জানান। এরপর নদীর তীর ভাঙন রোধে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয় প্রকল্পের।

ইতিপূর্বে ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর লামাকাজী বাজারস্থ একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপিও আশ্বস্ত করেছিলেন নদীর ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করার। তিনি বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাবস্থায় ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর লামাকাজী এলাকায় সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙন রক্ষায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১২০ কোটি ৭২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়।

আরো সংবাদ