AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথে সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলা : ইউপি মেম্বার’সহ গ্রেফতার ৫

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুন - ২৪ - ২০২০ | ৮: ২১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের মনোকুপা গ্রামে জায়গা-জমি নিয়ে চলমান বিরোধের জের ধরে মামাতো সমছু মিয়া ও ফুফাতো নূরুল ইসলাম পক্ষের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষে দুই বৃদ্ধ নিহত হওয়ার ঘটনায় এক পক্ষ থানায় মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উভয় পক্ষের ৫ জনকে গ্রেফতার করেছেন।

হামলা ও সংঘর্ষে নূরুল ইসলাম পক্ষের মনোকুপা গ্রামের মৃত হারিছ আলীর পুত্র ওয়ারিছ আলী (৬০) এবং সমছু মিয়া পক্ষের মৃত তছির মিয়ার পুত্র ও স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বার ফজলু মিয়ার বড় ভাই মখলিছ আলী (৬৫) নিহত হন। এছাড়া সমছু মিয়া, ওয়াব আলী, শেরওয়ান, এমরান মিয়া, কামরান মিয়া, আলকাছ আলী, আছকর আলী, সুহেল মিয়া, আরশ আলী, জুনায়েল আহমদ প্রমুখসহ উভয় পক্ষে আহত হয়েছেন ২০ জন।

সমছু মিয়া গংদের হামলায় নূরুল ইসলাম পক্ষের নিহত হওয়া ওয়ারিছ আলীর স্ত্রী নুরুন্নেছা বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে ২০ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৫ (তাং ২৪.০৬.২০ইং)। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে মনোকুপা গ্রামের মৃত মখলিছ মিয়ার পুত্র আকরাম মিয়া আবুলকে। অন্যদিকে দু’পক্ষের সংঘর্ষে সমছু মিয়া পক্ষের মখলিছ মিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ারা হলেন- সমছু মিয়া পক্ষের নিহত মখলিছ মিয়ার ভাই স্থানীয় ইউপি মেম্বার ফজলু মিয়া (৫০), গিয়াস উদ্দিন (২৫) এবং নূরুল ইসলাম পক্ষের নিহত ওয়ারিছ আলীর পুত্র রুহেল মিয়া (২৪), কলেজ ছাত্র সুহেল মিয়া (১৮) ও তাদের আত্মীয় পার্শ্ববর্তি বড়তলা গ্রামের মানিক মিয়া (৪৫)। বুধবার (২৪ জুন) বিকেলে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোকুপা গ্রামের নূরুল ইসলাম ও সমছু মিয়া গংদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকার সুবাদে দু’পক্ষের পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া জায়গা-জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। এনিয়ে গত রমজান মাসে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনাও সংগঠিত হয়। ওই বিরোধটি নিস্পত্তি করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল’সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সালিশের উদ্যোগ গ্রহন করেন। এতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে জামানতও প্রদান করে। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে উভয় পক্ষে সময় নেন। আর এসুযোগে উভয় পক্ষ দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ময়নুল ইসলাম, সালিশ ব্যক্তিত্ব আলফু মিয়া, বকুল আহমদ’সহ বৃহত্তর সিলেটের সালিশ ব্যক্তিত্বদের স্মরনাপন্ন হন। তারা বিষয়টি সালিশের পূর্বেই আপোষে মিমাংসার উদ্যোগ নেন এবং সৃষ্ঠ বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষ্যে সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে মনোকুপা গ্রামের পার্শ্ববর্তি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নিজগাঁও গ্রামের আবদুল আজিজের বাড়িতে সালিশ বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ওই বৈঠকের স্থান অলংকারী ইউনিয়নের বাহিরে হওয়ায় বৈঠকে উপস্থিত হতে অসম্মতি জানান নূরুল ইসলাম পক্ষ। বৈঠকের দিন সমছু মিয়া পক্ষের লোকজন বৈঠকে উপস্থিত হন। তবে এক পক্ষ অনুপস্থিত থাকায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় নি।

ওই দিন বিকেলে স্থানীয় মুন্সীরবাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথিমধ্যে নূরুল ইসলাম পক্ষের ওয়ারিছ আলীর উপর হামলা করেন সমছু মিয়া পক্ষের লোকজন। ওয়ারিছ আলীর উপর হামলার খবর পেয়ে নূরুল ইসলাম পক্ষের লোকজন সমছু মিয়া পক্ষের উপর পাল্টা হামলা করেন। উভয় পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার ফলে উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হন। এদিকে হামলা-পাল্টা হামলায় আহত হওয়া ওয়ারিছ আলী (৬০) ও মখলিছ মিয়া (৬৫)’কে চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এব্যাপারে স্থানীয় অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে জায়গা-জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। রমজান মাসে হামলা-পাল্টা হামলা হওয়ার পর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে বিষয়টি আপোষ-মিমাংশায় নিস্পত্তি করার উদ্যোগ গ্রহন করি। কিন্ত বিচারাধীন থাকা অবস্থায় উভয় পক্ষের লোকজন আলাদাভাবে আপোষের মাধ্যমে নিস্পত্তি করার উদ্যোগ নেন এবং আমার কাছ থেকে সময় নেন। এরি মধ্যে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে পুনঃরায় হামলা পাল্টার হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের দুইজন নিহত হয়েছে ও একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তি বলেন, এঘটনায় এক পক্ষ মামলা দায়ের করেছে। অপর পক্ষের মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরো সংবাদ