AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

‘ভয়ঙ্কর’ মানবপাচারকারী বিশ্বনাথের রফিক অবশেষে গ্রেফতার

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুন - ২ - ২০২০ | ২: ৪১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: লিবিয়ার ‘ভয়ঙ্কর’ মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য সিলেটের বিশ্বনাথের দালাল রফিক ইসলাম (৫৮)’কে অবশেষে গ্রেফতার করতে করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯)। সে উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের কাঠলীপাড়া গ্রামের মৃত চমক আলীর পুত্র। তার বিরুদ্ধে ৮টি মানবপাচার মামলা রয়েছে। দালাল রফিকের মাধ্যমে স্বপ্নের দেশ ইতালীর পথে গিয়ে গত বছরের মে মাসে ভুমধ্যসাগরে ডুবে মারা যায় অনেক সিলেটী যুবক।

সব জেনে-শুনেই হাসিমুখে তরতাজা যুবকদের ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় রফিক। এরপরও লিবিয়া পৌছালে জিম্মি করা হয় যুবকদের। বন্দি থাকা স্বজনের মৃত্যু ঠেকাতে সিলেটের রফিকের হাতেই তুলে দেওয়া হয় মুক্তিপণের টাকা। সেই টাকা রফিক হুন্ডির মাধ্যমে পাঠায় লিবিয়া। ওখানে রয়েছে তার ছেলে পারভেজ। সেও লিবিয়ার মানবপাচারকারী মাফিয়াদের একজন। তার মাধ্যমেই বাংলাদেশে মানবপাচার চক্রের গড়ে তুলে রফিক।

জানা যায়, প্রায় ৮ বছর আগে ছেলে পারভেজকে লিবিয়া পাঠান রফিক। পারভেজ লিবিয়া গিয়ে মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে ‘থিতু’ ছদ্দ নামে সে পরিচিত হয়ে যায়। লিবিয়াতে বসে বাংলাদেশের নেটওয়ার্কের পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করে পারভেজ। সে দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরে। সিলেট থেকে পাচার করা মানুষ গেলে সে প্রায়ই তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে। জিম্মিকালে পরিবারকে টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ করে। ছেলের সূত্র ধরে সিলেটে মানবপাচারের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ঘটায় রফিক। সে প্রথমে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক মানুষ সংগ্রহ করতো। পরে সে মানুষ নিয়োগ করে। এলাকায় এলাকায় তার নিয়োজিত এজেন্টরা এই কাজ করতো। আর বিদেশে পাচারের বিষয়টি দেখভাল করতো রফিকের মেয়ে পিংকি। তার একাউন্টেই লেনদেন হয় দালালির কোটি কোটি।

রফিক ও ছেলে পারভেজের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বপ্নের দেশ ইতালী যাওয়ার পথে ভুমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে মারা যায় বিশ্বনাথের যুবক রেজওয়ানুল ইসলাম খোকন’সহ সিলেটী অনেক যুবক। ভুমধ্যসাগর ট্র্যাজেডির পর রফিক, তার ছেলে পারভেজ ও মেয়ে পিংকি’সহ দালালচক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে বিশ্বনাথ থানায় মামলা করেছিলেন মারা যাওয়া খোকনের ভাই রাজু। এছাড়া হবিগঞ্জে বানিয়াচংয়ে রানা নামে আরো এক জন মামলা করেন। এর বাইরে জালালাবাদ থানা, দক্ষিন সুরমা থানা ও গোলাপগঞ্জ থানা সহ সিলেটের আরো কয়েকটি থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগিরা। মামলা দায়ের পরই এলাকা থেকে স্বপরিবারে পালিয়ে যায় রফিক।
কয়েক মাস পূর্বে পিংকিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। প্রেপ্তারের পর পিংকির কাছ থেকে রফিক, পারভেজ ও পিংকির মানবপাচারের নেটওয়ার্ক জানতে পারে আইনশৃংখলা বাহিনী। একবছর কারাগারে থাকার পর সম্প্রতি ঈদের আগে জামিনে মুক্তি পায় পিংকি। স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগিরা ইতিমধ্যে রফিক ও তার পরিবারের মানবপাচারের অনেক তথ্যর খুজ পেয়েছেন। মিলেছে মানবপাচারের ভয়ঙ্কর তথ্য। মানবপাচারের নির্মম ঘটনায় টাকাওলা বনে যাওয়া রফিক নিজ গ্রামে বানিয়েছে পাকা বাড়ি। দুটি বাস, দুটি মাইক্রোবাস ও তিনটি সিএনজি অটোরিক্সার মালিক সে।

মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতককালে ঢাকায় ছিলো রফিক। সেখানে বসেই দেশজুড়ে মানবপাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে সে। ঈদ পালন করতে সম্প্রতি বাড়িতে আসে আসলে সোমবার (১ জুন) বিকেলে নিজ বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর সোমবার রাতেই তাকে বিশ্বনাথ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯ এর এএসপি (মিডিয়া অফিসার) ওবাইন।

এদিকে, স্বজন হারানো শোকার্ত পরিবারগুলোর চোখ এখনও সরছে না দালাল রফিক চক্রের উপর থেকে। তাদের গতিবিধি দিকেও তারা নজর রাখছে। আর যাতে কোনো মায়ের কোল খালি না হয় সে কারণে তাদের এই নজরদারি। ভুমধ্যসাগরের চিরতরে হারিয়ে যাওয়া রেজওয়ানুল ইসলাম খোকনের ভাই রেজাউল ইসলাম রাজু বলেন, আমরা জান ও মাল সব হারালাম। এখন বাকী শুধু বিচার। এই বিচার হলেই আমরা খুশী হবো। আমরা চাই- আর কোনো মায়ের কোল যেনো খালি না হয়।

আরো সংবাদ