শিশুদের দুষ্টুমি বা জেদি আচরণ অনেক সময় বাবা-মায়েদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের খারাপ আচরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কখনো কখনো বাচ্চাদের আচরণ এমন হয়ে দাঁড়ায় যে তারা বাড়িতে জিনিসপত্র ভাঙচুর বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে এবং আরও মারাত্মক খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এসব কারণে অনেক বাবা-মা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তবে শিশুদের শাসন কেবল তাদের আচরণ সংশোধন নয়, বরং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমেও আসতে পারে সমাধান। চলুন, জেনে নিই কীভাবে শিশুদের ইতিবাচক উপায়ে শাসন করলে সমাধান আসতে পারে।
শান্ত এবং সংযত থাকা জরুরি
যখন শিশুরা খারাপ আচরণ করে, তখন রাগ হওয়া স্বাভাবিক। তবে এমন সময়ে আপনার শান্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের সামনে আপনার আচরণ একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। তাদের সামনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করলে, তারা তাদের ভুল আচরণের ফলাফল সহজেই বুঝতে পারে এবং তারা তা পরিহার করার চেষ্টা করে।
ভুলের জন্য শাস্তির বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানানো
যখন কোনও শিশু খারাপ আচরণ করে তখন তাকে শান্তভাবে বোঝান কীভাবে তার কাজের জন্য শাস্তি হতে পারে। প্রতিটি ভুলের জন্য একটি নির্দিষ্ট শাস্তি দিতে হবে, যাতে শিশুটি বুঝতে পারে কোন আচরণটি অগ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হলে শিশুটি তার আচরণে কোনো পরিবর্তন আনবে না।
ইতিবাচক অনুপ্রেরণা দিয়ে বোঝানো
শাস্তির তুলনায় ইতিবাচক অনুপ্রেরণা অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে। যখন আপনার সন্তান ভাল আচরণ করে, তখন তার প্রশংসা করুন এবং তাকে উৎসাহিত করুন। এটি শিশুকে ভালো আচরণে অনুপ্রাণিত করবে এবং তার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। শিশুর প্রতি আপনার ইতিবাচক মনোভাব তাকে আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করবে।
মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া
শিশুর খারাপ আচরণের একটি সাধারণ কারণ হল একঘেয়েমি বা মনোযোগ আকর্ষণ করার ইচ্ছা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাদের মনোযোগ অন্য কোনো কার্যকলাপের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া একটি কার্যকরী কৌশল হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি শিশু খেলনা না পেয়ে জেদ করে। তবে তাকে অন্য কোনো মজাদার কার্যকলাপে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে।
স্পষ্ট নিয়ম তৈরি করুন
শিশুদের একটি কাঠামো দরকার যার মধ্যে তারা কাজ করতে পারে। স্পষ্ট নিয়ম তৈরি করুন এবং সেগুলি শিশুকে সহজ ভাষায় বোঝান। নিয়মের প্রতি আনুগত্যের জন্য মাঝে মাঝে তাদের মনে করিয়ে দিন, যাতে তারা জানে কোন আচরণটি গ্রহণযোগ্য এবং কোনটি নয়। এটি শিশুকে তার আচরণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
শিশুকে বোঝার চেষ্টা করুন
মাঝে মাঝে শিশুর খারাপ আচরণ তাদের অনুভূতি প্রকাশ করার অক্ষমতার ফলস্বরূপ হতে পারে। তাদের অনুভূতিগুলি বোঝার চেষ্টা করুন এবং সমস্যার মূল দিকে পৌঁছানোর জন্য সহানুভূতি দেখান। এটি কেবল তাদের আচরণকে উন্নত করবে না, বরং আপনিও তাদের সঙ্গে আরও দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন।
সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি শেখান
শিশুকে শুধু কী করতে নিষেধ করা উচিত তা বলার পরিবর্তে, কীভাবে সমস্যা সমাধান করতে হয় তাও শেখান। তাদেরকে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা শেখালে তারা নিজেরাই সমস্যাগুলি সমাধান করতে শিখবে। এতে তারা আরও আত্মনির্ভরশীল ও বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতে নিজেদের দুর্ভোগের মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।