আল্লাহ তাআলার একটি চিরন্তন নীতি হল যে, প্রতিটি কঠিন অবস্থার সঙ্গে সহজীকরণের ব্যবস্থা থাকে। ইসলামী আইনজ্ঞদের মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ ধারণা হলো—‘কষ্ট সহজতার পথ তৈরি করে।’ যেমন শীতকাল কিছু শারীরিক কষ্ট ও ঠাণ্ডা পরিবেশ নিয়ে আসে, তেমনি এর সাথে অনেক আরামও থাকে। শরিয়ত শীতকালে সৃষ্ট অসুবিধাগুলোর জন্য বিশেষ কিছু সুযোগ দিয়েছে।
এখানে কিছু শিথিলতার সুযোগ তুলে ধরা হলো—
গরম পানির ব্যবহার
শীতকালে পানি এতটাই ঠাণ্ডা হয়ে যায় যে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে শরিয়ত ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা দেয়নি, বরং গরম পানি ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। যদি গরম পানি না পাওয়া যায় এবং ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করতে হয়, তাতেও অনেক সওয়াব পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এক হাদিসে বলা হয়েছে, শীতকালে অজু করার সময় অঙ্গ ভালোভাবে ধৌত করা এবং পূর্ণাঙ্গ অজু করা পাপ মুছতে সাহায্য করে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাব না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপ মোচন করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? মানুষ বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলুন। তিনি বলেন, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণ অজু করা। মসজিদে বেশি পদচারণা করা এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা; এগুলো হলো নেকির জন্য পাহারাদারের মতো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৭৫)
তায়াম্মুম করা
শীতের সময়ে যদি গরম বা উষ্ণ পানি পাওয়া না যায় এবং ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে। তবে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক গজওয়ায়ে জাতুস সালাসিলের সময়, তীব্র শীতের মধ্যে আমর ইবনে আস (রা.) তায়াম্মুম করে ইমামতি করেছিলেন।
এই ঘটনা নবী করিম (সা.)-এর কাছে শোনানোর পর, তিনি মৃদু হাসলেন এবং কিছু বলেননি। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৩৪)
মোজার ওপর মাসাহ করা
শীতের দিনে কিংবা সাধারণ পরিস্থিতিতে কেউ যদি মোজার ওপর মাসাহ করতে চান, তবে তা বৈধ। তবে ফুকাহায়ে কিরাম কিছু শর্ত দিয়েছেন, যেগুলো পূর্ণ হলে মোজার ওপর মাসাহ করা সম্পূর্ণ জায়েজ।
(মুসান্নাফে আবি শাইবা, হাদিস : ১৯৭৬; ফাতহুল কাদির লি ইবনে হুমাম, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫৭)
ঘরে নামাজ আদায় করা
জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যার অসংখ্য ফজিলত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবুও ফুকাহায়ে কিরাম বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছেন, যেমন শীতের কারণে ঘর থেকে বের হওয়া বিপজ্জনক হলে।
নাফে (রহ.) বলেন, এক শীতের রাতে ইবনে উমর (রা.) যাজনান এলাকায় আজান দিলেন। পরে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘তোমরা ঘরে নামাজ পড়ো।’ পরে তিনি জানান, আল্লাহর রাসুল (সা.) শীতের রাতে মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বলেছিলেন এবং লোকদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩২; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯৭)