শীতকাল বাংলাদেশীদের জন্য যেমন আনন্দের সময়, তেমনি এ ঋতুতে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ারও নানা সম্ভাবনা থাকে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া, শুষ্কতা এবং কম তাপমাত্রায় শরীরের উপর বাড়তি চাপ পড়ে যা বাড়িয়ে তোলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ সময়। তাই শীতে সুস্থ থাকার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে শীতের পোশাকের পাশাপাশি যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মেনে চলা খুব জরুরি তা হলো-
১. শরীরকে ভেতর থেকে গরম রাখা- শীতকালে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য গরম স্যুপ, লেবু চা, আদা চা এবং মধু খাওয়া উচিত। এসব খাবার শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়। শীতকালে ঠাণ্ডা পানীয় এবং অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার থেকে বিরত থাকা ভাল কারণ এসব খাবার শরীরকে ঠাণ্ডা করে এবং রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
২. ত্বককে রক্ষা করা- শীতকালে শুষ্কতা ও ত্বক ফাটার সমস্যা বৃদ্ধি পায় যা ত্বকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ত্বক আর্দ্র রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এবং বিশেষ করে হাত, পা ও মুখে ক্রিম লাগানো প্রয়োজন। শীতে ত্বকে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহারের থেকেও বিরত থাকা উচিত কারণ গরম পানি ত্বককে আরও শুষ্ক করে ফেলতে পারে।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ- শীতে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে বিশেষত বয়স্কদের মধ্যে। এজন্য রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা উচিত এবং দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শীতে হঠাৎ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
৪. সুষম খাদ্য গ্রহণ- শীতকালে সুষম খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। বিশেষ করে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলা, আমলা, পেঁপে এবং শাকসবজি বেশি খেতে হবে। এছাড়া তেলের পরিমাণ কমিয়ে হালকা খাবার গ্রহণ করা উচিত।
৫. নিয়মিত ব্যায়াম- শীতের সময় শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শীতে বিশেষভাবে হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম অথবা হালকা ব্যায়াম করা উচিত। ব্যায়াম শরীরের চলাচল বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং শীতজনিত রোগের ঝুঁকি কমাবে।
সর্ম্পকিত খবর:: হিমোগ্লোবিন সল্পতায় দেখা দিতে পারে শরীরে যে লক্ষণ
৬. ঘর ভেতরও সতর্কতা- শীতে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঘর উষ্ণ রাখতে গরম পানি বা হিটার ব্যবহার করা হলেও অতিরিক্ত গরম পরিবেশ শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাছাড়া ঘরের বাতাস স্যাঁতসেঁতে বা অস্বাস্থ্যকর যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। আর্দ্রতা বজায় রাখতে মোমবাতি বা আর্দ্রতা শোষক ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন- শীতকালে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অনুভব করতে পারেন বিশেষত যদি সূর্যের আলো কম পাওয়া যায়। মৌসুমী বিষণ্নতা (SAD) একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে থাকে এই সময়ে। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে নিয়মিত মেডিটেশন, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সূর্যের আলোতে বাইরে কিছু সময় কাটানো উচিত। এতে শরীর ও মন উভয়ই সুস্থ থাকবে।
৮. ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং অন্যান্য ভ্যাকসিন নেওয়া- শীতকালে ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়, তাই ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার মতো শীতকালীন রোগ থেকে রক্ষা পেতে ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদিও বাংলাদেশে শীতকালীন ভ্যাকসিনের ব্যবহার এখনও সীমিত। তবে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা যদি এটি উপলব্ধ থাকে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।