প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের প্রচলিত পদ্ধতি পর্যালোচনা করে ননলিথ্যাল অস্ত্র ব্যবহারের সুপারিশ করবে ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’। দাঙ্গা দমন বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ননলিথ্যাল অস্ত্র, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহারের সুপারিশ করা হবে। পাশাপাশি, পুলিশ কমিশন গঠন এবং পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখারও সুপারিশ রয়েছে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৩ অক্টোবর ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’ গঠিত হয়। কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান সাবেক সিনিয়র সচিব সফর রাজ হোসেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি অংশ দাঙ্গা, রাজনৈতিক সমাবেশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চায়নিজ রাইফেলসহ ব্যবহার করে প্রাণঘাতী অস্ত্র। এমনকি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটে, যা কারণ হয় বহু মানুষের প্রাণহানির। এসব ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।
সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, বলপ্রয়োগে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের আইনি ধারাগুলো পর্যালোচনা করে সংশোধন বা বাতিলের সুপারিশ করা হবে। দাঙ্গা বা বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস, জলকামান এবং সাউন্ড গ্রেনেডের মতো ননলিথ্যাল অস্ত্র ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
কমিশন আরও প্রস্তাব করেছে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের, যা সরকারের সঙ্গে পুলিশের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবে। কমিশনের মতে, গত ১৫ বছর পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারনে সরকারের পতনের পর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে পুলিশ বাহিনীর ওপর।
বর্তমানে কনস্টেবল, উপপরিদর্শক (এসআই) এবং সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি)—এই তিনটি পদে পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হয়। সংস্কার কমিশন প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দুটি ধাপে—কনস্টেবল এবং এএসপি—সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেছে।
কমিশন ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি-বেসরকারি অংশীজন এবং সাধারণ জনগণের মতামত নিয়েছে। “কেমন পুলিশ চাই” শিরোনামে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মতামত আহ্বান করা হয়েছে। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন জানিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ প্রণয়ন শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
সর্ম্পকিত খবর: দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলা: ভাঙচুর, লুটপাট, বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন
কমিশন আরও প্রস্তাব করেছে, সরকারি চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়া তুলে দেওয়ার। এতে যোগ্য প্রার্থীরা অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কমিশনের মতে, কিছু সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলেও কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় এবং অর্থের প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি সরকারি আইন ও বিধিবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।